নিহত: মহম্মদ ইলিয়াস।
নদীর চর দখলকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরল ডুয়ার্সে। প্রকাশ্য দিনের আলোয় নদীর চরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হলেন এক যুবক। মৃতের নাম মহম্মদ ইলিয়াস (৩৫)। তিনি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। তাঁকে খুনে মূল অভিযুক্ত সোহেল সরকারও তৃণমূল কর্মী। সোহেলের দাদা মহম্মদ রাসেল মালবাজার ব্লকের তৃণমূল নেতা।
বুধবার বিকেলে মালবাজার থানার ওদলাবাড়ির ঘিস নদীর চরে ঘটনাটি ঘটে। ইলিয়াস ঘিস নদী লাগোয়া হিন্দি স্কুল পাড়ার বাসিন্দা। ভাল ছেলে হিসাবেই এলাকায় পরিচিত ছিল। সোহেল ও মহম্মদ রাসেলের ঘিস নদীর বালি তোলার বরাত রয়েছে। এ দিন ঘিস নদীরই একটি বরাতহীন উন্মুক্ত এলাকার দখল নিয়েই বচসা বাঁধে। সোহেল আচমকাই মহম্মদ ইলিয়াসের পেটে চাকু ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই ইলিয়াস নেতিয়ে পড়ে, মালবাজার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরেই ওদলাবাড়ি জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্তের উপর ক্ষোভ আছড়ে পড়ে। সপরিবারে সোহেলরা গা ঢাকা দিলেও অভিযুক্তদের দু’টি ট্রাক জনরোষে নদীর চরেই ছাই হয়ে যায়। ঘিস বস্তিতে থাকা অভিযুক্তদের বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চলে। মালবাজার থানার বিরাট পুলিশের বাহিনী এলেও উত্তেজনা কমেনি।
ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল। উল্লেখ্য ঘিস নদীর বালি তরাই ডুয়ার্সের মধ্যে গুণগত মানে উপরের দিকে রয়েছে। এই নদীর বালি পাথরের উপর শিলিগুড়ি শহরে নির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই এই নদীর রাশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজনৈতিক ও পেশি দুই শক্তিরই প্রদর্শন চলে। কার্যত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে ঘিসের বালির লুঠপাট চলে বলেও বিরোধী দলগুলির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
ওদলাবাড়ির তৃণমূলের প্রধান নেতা তথা মালবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তমাল ঘোষ চিকিৎসার জন্য ভিন্ রাজ্যে। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নদীর বিষয় নিয়ে খুনে কোনও ভাবেই দলের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। তাই কোন অবস্থাতেই অপরাধীকে আড়াল করা যাবে না। আইন এক্ষেত্রে আইনের পথেই চলবে।’’ তবে সৌরভের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেনি বিরোধীরা। সিপিএমের মালবাজার এরিয়া কমিটির সম্পাদক পার্থ দাস বলেন, ‘‘শাসকদলের সৌজন্যে সিন্ডিকেটরাজ, বালি মাফিয়া এখন উত্তরবঙ্গে চলে এসেছে। ডুয়ার্সের নদীগুলোতে যা চলছে, তাতে এই খুনের ঘটনায় অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।’’ বিজেপির ওদলাবাড়ির সহ সভাপতি অখিল সরকার দ্রুত আইনি পদক্ষেপ দাবি করেছেন। মালবাজারের এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেন। তবে শেষ খবর মেলা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy