Advertisement
E-Paper

ত্রাণ শিবিরে এখনও ‘নেই-নেই’ অভিযোগ

ওষুধ আছে, চিকিৎসক নেই। থালা-বাসন আছে খাবার নেই। লোডশেডিং হলে মোমবাতি নেই। ত্রাণ শিবির শুরু হওয়ার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ‘নেই-নেই’ অভিযোগ মিরিকের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। শনিবার টিংলিঙের একটি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে এমন-ই নানা অভিযোগ শুনলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০১:৩২
রন্তিখোলায় সারানো হচ্ছে সেতু।

রন্তিখোলায় সারানো হচ্ছে সেতু।

ওষুধ আছে, চিকিৎসক নেই। থালা-বাসন আছে খাবার নেই। লোডশেডিং হলে মোমবাতি নেই। ত্রাণ শিবির শুরু হওয়ার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ‘নেই-নেই’ অভিযোগ মিরিকের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে।

শনিবার টিংলিঙের একটি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে এমন-ই নানা অভিযোগ শুনলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। ত্রাণ শিবিরের অব্যবস্থার কথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদককে জানাবেন বলে অশোকবাবু জানিয়েছেন। এ দিন অবশ্য সরকারি ভাবে নয়, দলের প্রতিনিধি হিসেবেই অশোকবাবু মিরিকে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠকও। টিংলিঙের ত্রাণ শিবির ঘুরে মিরিক হাসপাতালে গিয়ে জখমদের সঙ্গে কথা বলেছেন অশোকবাবু। পরিদর্শনের দলকে দেখেই রেখা দেবী এগিয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আতঙ্কে তালাবন্ধ করে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে থাকছি। মাঝেমধ্যে প্রয়োজনে বাড়িতে আসতে হয়। অথচ চার দিন হতে চললেও, ধসে নষ্ট হয়ে যাওয়ার রাস্তাটুকু পর্যন্ত ঠিক হল না।’’

গ্রাম থেকে ফের চড়াই পথে উঠে রাস্তায় পৌঁছে একপাশে টিংলিং প্রাথমিক স্কুল। সেখানে অন্তত দু’শো বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলের মাঠের মাঝখানে টেবিল পেতে ভাত-মুসুরির ডাল-স্কোয়াশের ঝোল এবং ভাডা পাপড়ের টুকরো বিলি হচ্ছে। মাঠের একপাশে একটি সংস্থার তরফে আনা ত্রাণ সামগ্রী ডাই করে রা‌খা। তাতে ওষুধও রয়েছে। স্কুলের বারান্দায় জড়ো হয়ে থাকা ভিড়কে লক্ষ্য করে অশোকবাবু বললেন, ‘‘যাক ওষুধ, খাবার আছে দেখছি। আর কী প্রয়োজন রয়েছে?’’ কথা শেষ না হতেই ভিড় থেকে শুরু হল অভিযোগের পালা। প্রভা থাপা, রোমা থাপারা চিৎকার করে বললেন, ‘‘স্যার ওষুধ দেখছেন, কিন্তু চিকিৎসক নেই। একটা অ্যাম্বুলেন্সও নেই। সন্ধ্যে হলেই লোডশেডিং শুরু হয়, একটা মোমও পাই না। অন্ধকারে বসে থাকতে হয়। তিন দিন ধরে আছি স্কুল পরিষ্কারও হয় না। দুর্গন্ধে থাকতে পারি না।’’

মিরিকের টিংলিংয়ে ত্রাণ শিবিরে শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

আশ্রিতরা অভিযোগ করলেন, এ দিন শনিবার থেকেই রান্না করা খাবার বিলি শুরু হয়েছে। শিবিরে থাকা টিংলিঙ চা বাগানের এক মহিলা কর্মীর অভিযোগ, ‘‘যে খাবার বিলি হচ্ছে, তাও মুখে তোলা যায় না।’’ অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পরে আর কোনও মন্ত্রীর দেখা মিলছে না।’’

ত্রাণ নিয়ে টানাপোড়েন রয়েছে জিটিএ এবং জেলা প্রশাসনেরও। এলাকার জিটিএ-এর সদস্য অরুন সিকচির দাবি, ‘‘আজ থেকে আমরাই রান্না করা খাবার দিতে শুরু করেছি। এতদিন প্রশাসন চাল আর ডাল বিলি করে দায় সেরেছে। প্রশাসনের কেউ ত্রাণ শিবিরের খোঁজও নিতে আসছেন না।’’ তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘অবিবেচনাপ্রসূত কথাবার্তার কোনও উত্তর দিতে চাই না। প্রতিদিন ওখানে যাওয়ার থেকেও ত্রাণ বিলিতে নজরদারি চালানোই মূল কাজ। আজকেও কয়েক দফায় বিভাগীয় কমিশনার, জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওখানে কয়েকজন আধিকারিককে সর্বক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

এ দিকে এ দিন বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জলের লাইন, রাস্তা, বিদ্যুৎ, সব কিছুই নতুন করে করতে হবে। বহু রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। জল নেই অনেক জায়গায়। সেগুলো দ্রুত সারানোর কাজ চলছে।’’ তিনি জানান, নবান্ন থেকে তিনি প্রতি মুহূর্তে পাহাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

মিরিকের টিংলিং ক্যাম্পে আশ্রিতেরা।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, রক্তিখোলা সেতুর কাছে রস্তায় ভাঙন হয়েছিল। ওটা মেরামত করা হয়েছে। শিলিগুড়ি-মিরিক রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ছিল। আজ, রবিবার থেকে তা চালু হয়ে যাবে। পাহাড়ে ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সাহায্য হচ্ছে কী না সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, কাশ্মীর সরকার ৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল। পেয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতির পরিমাণ কত, তা সরকার এখন খতিয়ে দেখছে। জিটিএ-কে বলা হয়েছে, তারাও তাদের মতো পর্যালোচনা করছে। তারপর সরকার কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। তাকে এ প্রশ্নও করা হয়, বিমল গুরুঙ্গ কী কোনও আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন? উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের কোষাগার থেকেই তো জিটিএ-কে টাকা দেওয়া হয়। আমরা আমাদের ক্ষমতা মতো দিই। তবে মানুষ বিপদে পড়লে তো দূরে সরে থাকা যায় না। আমরা পাহাড়ের পাশে আছি। এই দুঃসময়ে এক সাথেই কাজ করব।’’

ছবি: সন্দীপ পাল ও রবিন রাই।

mirikh land slide siliguri ashok bhattacharya refugee camp anirban roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy