Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গণবিবাহ বীরপাড়ায়

সাহরুল পরবে রবিবার বীরপাড়ার সারনা আদিবাসী ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত গণবিবাহে ৬২ জোড়া পাত্র-পাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। রবিবার সকালে শালগাছ পুঁতে সারনা পুজো করা হয়। পুজোর শেষে বেলা বারোটা নাগাদ শুরু হয় গণবিবাহ। গণবিবাহের জন্য শনিবার বিকেলে বীরপাড়া ও পার্শ্ববর্তী চা বাগানের ৫০১ জন কুমারী মেয়ে বিরবিটি ঝোড়া থেকে কলসযাত্রা করে জল নিয়ে আসেন।

বিবাহের পরে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বিবাহের পরে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

সাহরুল পরবে রবিবার বীরপাড়ার সারনা আদিবাসী ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত গণবিবাহে ৬২ জোড়া পাত্র-পাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। রবিবার সকালে শালগাছ পুঁতে সারনা পুজো করা হয়।

পুজোর শেষে বেলা বারোটা নাগাদ শুরু হয় গণবিবাহ। গণবিবাহের জন্য শনিবার বিকেলে বীরপাড়া ও পার্শ্ববর্তী চা বাগানের ৫০১ জন কুমারী মেয়ে বিরবিটি ঝোড়া থেকে কলসযাত্রা করে জল নিয়ে আসেন। এ দিন সদ্যবিবাহিতদের মধ্যে যেমন নব বর-বধূ-রা ছিলেন, তেমনই দীর্ঘদিন এক সঙ্গে থাকা দম্পতিরাও ছিলেন। পাঁচ – সাত বছর ধরে সন্তান নিয়ে ঘর সংসার করা বেশ কিছু দম্পতিও এদিন গণবিবাহে আবদ্ধ হন।

বীরপাড়া চা বাগানের বিপিন টপ্পো বা বিচ চা বাগানের বিশোনি টপ্পো— তাঁদের যেমন পাঁচ বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছরের একটি ছেলে আছে। সাত বছর ধরে সন্তান নিয়ে ঘর সংসার পাতলেও বিয়ে করার মতো সামর্থ ছিল না বলে জানালেন। রবিবার তাঁদের বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হল। এথেলবাড়ির রিমঝিম ওঁড়াও বা টুকরা জটেশ্বরের রাজেশ ওঁড়াও। চার বছরের একটি ছেলে থাকলেও বিয়ে করতে পারেনি। রবিবার বীরপাড়ার গণবিবাহে ছেলে আনসু ওঁড়াওকে কোলে নিয়েই এই দম্পতি বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। রাজেশ ওঁড়াও বলেন, “ঘর-সংসার করলেও বিয়ে করার মত টাকা ছিল না। বাড়িতে বিয়ে করতে গেলে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শি সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে হত।”

এ দিন গণবিবাহে বিয়ে করেছেন বন্ধ বাগানের যুবক-যুবতীরাও। বন্ধ রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের দাহারু ওঁড়াও ও চুমান্তী ওঁড়াও, বন্ধ বান্দাপানি চা বাগানের লুথার মিনজ ও বন্দাই ওঁড়াও ছাড়াও বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের তরুণ-তরুণীরা জানালেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণেই নিজেরা বিয়ের খরচ জোগাড় করতে পারেননি। বন্ধ বান্দাপানি চা বাগানের পাত্র লুথার মিনজ বলেন, “বাগান বন্ধ থাকায় নিজে টাকা খরচ করে বিয়ের কথা চিন্তাই করতে পারিনি। যখন শুনলাম বীরপাড়ায় বিনা খরচে বিয়ের আসর বসছে, তখন যোগাযোগ করে দীর্ঘদিন ধরে সংসার করে খাওয়া বন্দাইকে গণবিবাহে এসে বিয়ে করলাম।’’

ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিটি বিয়েই সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি জোড়া পাত্র-পাত্রীর জন ছয়জনকে খিচুরি-সব্জি খাওয়ানো হয়। তাছাড়া পাত্র-পাত্রীর বিয়ের পোশাক, শাঁখা ও বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় মাঠের এক প্রান্তেই অনুষ্ঠিত হয়েছে নানা আদিবাসী সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস ভগৎ বলেন, “প্রতি বছরই আমরা চাঁদা তুলে গণবিবাহের আয়োজন করি। আদিবাসী সমাজে যারা টাকা পয়সার অভাবে বিয়ে করতে পারে না, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mass marriage Birpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE