Advertisement
E-Paper

ভয় কাটাতে বই লেখেন ‘অঙ্ক-দাদু’

বালুরঘাটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিহির সমাজদার। বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে। কিন্তু তিনি এখনও অঙ্কেই আটকে আছেন। তাই কেউ তাঁকে ডাকে অঙ্কদাদু। কেউ বা বলে অঙ্কের ফেরিওয়ালা।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৯
উত্তরবঙ্গ বইমেলায় মিহির সমাজদার। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গ বইমেলায় মিহির সমাজদার। —নিজস্ব চিত্র।

করালী স্যর স্বপ্নে অঙ্ক পান। তিনি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অঙ্ক কষেন। অঙ্ক না মিললে তাঁর ঘুম আসে না। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ গল্পের সেই শিক্ষকের মতো কারও দেখা কি বাস্তবে মেলে? শিলিগুড়ি বইমেলায় গিয়ে এমনই একজনের খোঁজ পাওয়া গেল। বালুরঘাটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিহির সমাজদার। বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে। কিন্তু তিনি এখনও অঙ্কেই আটকে আছেন। তাই কেউ তাঁকে ডাকে অঙ্কদাদু। কেউ বা বলে অঙ্কের ফেরিওয়ালা।

মিহিরবাবুর জীবনও গল্পের থেকে কিছু কম নয়। অষ্টম শ্রেণিতে অঙ্কে ফেল করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে জেদ চেপে যায়, অঙ্ক শিখতেই হবে। তবু শেখাই নয়, পড়াশোনা শেষ করে মিহিরবাবু অঙ্কেরই শিক্ষকতা শুরু করেন। দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে তিনি ছাত্রছাত্রীদের মন থেকে অঙ্ক-ভীতি দূর করতে চেয়েছেন। সে জন্য ৭০টিরও বেশি বই লিখে ফেলেছেন। এখন সেই বইগুলি নিয়েই বইমেলা থেকে বইমেলায় ঘুরে বেড়ান।

অক্টোবর থেকে মার্চ, এই ছ’মাস রাজ্য জুড়ে নানা জায়গায় বইমেলা হয়। এই অর্ধেক বছর তিনি ঘরছাড়া। ঘুরে বেড়ান মেলাগুলোয়। বাকি ছ’মাস কেউ তাঁর বই পায় না। তিনি বলেন, ‘‘আমি শুধু বইমেলাতেই বই বেচি।’’ নার্সারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সিলেবাস অনুযায়ী অঙ্ক সমাধানের নানা পদ্ধতি-সহ বই লিখেছেন মিহিরবাবু। রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার অঙ্ক সমাধানের বইও। অঙ্ক নিয়ে গবেষণামূলক দু’টি বইও লিখে ফেলেছেন। আর একটি বই লেখার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত মিহিরবাবুর ছাত্র সুবিমল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে কী ভাবে গ্রাহকরা প্রতারিত হয়, সেটা নিয়ে অঙ্ক স্যারের লেখা বইটি অনবদ্য। উনি যে সব অঙ্ক করাতেন, সেগুলি নিয়ে আগের দিন ভাবতে বলতেন। পরের দিন নানা পদ্ধতিতে একই অঙ্কের সমাধান করতেন। মনে হত, গল্পের ক্লাস করতাম। এখনও সমস্যায় পরলে স্যারের কাছে যাই।’’

মিহিরবাবু নিজেও বলেন, ‘‘গল্পের ছলে সমাধান করতে পারলে তবেই ভীতি কাটবে। সেই পদ্ধতি তৈরি করতেই সারা জীবন ধরে খাটছি।’’ বই বিক্রির টাকায় তিনি নতুন বই ছাপান। নিজেই লেখক, নিজেই প্রকাশক, নিজে বিক্রেতা। বালুরঘাটের সংসারে, যেখানে তিনি বছরের ছ’মাস কাটান, সেখানে আছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তাঁর স্ত্রী মাধবী সরকার এবং একমাত্র ছেলে সত্যসাধন। ছেলে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।

এখনও ভোরে উঠে বারান্দায় বসে অঙ্ক মেলাতে বসেন মিহিরবাবু। বইয়ে নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন। চান, রোজ আসুক নতুন প্রশ্ন। অঙ্কদাদু বলেন, ‘‘নিত্য নতুন প্রশ্ন না পেলে ভাল লাগে না!’’

Mihir Samajdar Mathematician মিহির সমাজদার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy