Advertisement
E-Paper

৪৭টি নলকূপের মধ্যে ৪৫টি অকেজো

ভোরের আলো ফুটতেই জল নেওয়ার জন্য লাইন দিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় লতেজা খাতুন, নীতি মন্ডলদের। এলাকায় ৪৭টি নলকূপের মধ্যে ৪৫টিই যে অকেজো। জল মেলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দান করা দুটি গভীর নলকূপে। গরমে তাতেও জল ওঠে সামান্যই। কিন্তু দুটি নলকূপে কি আর তিন হাজার বাসিন্দার সমস্যা মেটে। অনেককেই তাই মাঠে শ্যালোর খোঁজে ছুটতে হয়। আর দৈনন্দিন কাজে ভরসা মহানন্দার জল। এলাকার নাম বলরামপুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০২:৩৬
জলের অভাব বলরামপুরে। দৈনন্দিন কাজে ভরসা মহানন্দা। ছবি: বাপি মজুমদার।

জলের অভাব বলরামপুরে। দৈনন্দিন কাজে ভরসা মহানন্দা। ছবি: বাপি মজুমদার।

ভোরের আলো ফুটতেই জল নেওয়ার জন্য লাইন দিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় লতেজা খাতুন, নীতি মন্ডলদের। এলাকায় ৪৭টি নলকূপের মধ্যে ৪৫টিই যে অকেজো। জল মেলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দান করা দুটি গভীর নলকূপে। গরমে তাতেও জল ওঠে সামান্যই।

কিন্তু দুটি নলকূপে কি আর তিন হাজার বাসিন্দার সমস্যা মেটে। অনেককেই তাই মাঠে শ্যালোর খোঁজে ছুটতে হয়। আর দৈনন্দিন কাজে ভরসা মহানন্দার জল। এলাকার নাম বলরামপুর। তবে মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পন্চায়েতের বলরামপুরই নয়। ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ এলাকাতেই পানীয় জলের হাহাকারের ছবিটা একই রকম। নলকূপ অকেজো হয়ে তীব্র জলকষ্ট শুরু হওয়ায় বাধ্য হয়ে বাসিন্দাদের অনেককেই নদী বা পুকুরের জল খেতে হচ্ছেও বলে অভিযোগ উঠেছে। দূষিত জল খেয়ে ওই ব্লকে এর মধ্যেই আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে! তারপরেও অকেজো নলকূপ সংস্কার-সহ পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েত-প্রশাসন উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁচল-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা মহানন্দা নদী সংলগ্ন হওয়ায় এলাকার জলস্তর এমনিতেই অনেক নীচে। আবার গরমে সাধারণ নলকূপগুলি অকেজো হয়ে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সমস্যার কথা অজানা নয় প্রশাসনেরও। চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জলস্তর নেমে যাওয়ায় একাধিক এলাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। অকেজো নলকূপগুলি সংস্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।’’

কিন্তু গভীর নলকূপ না বসিয়ে সাধারণ নলকূপগুলি সংস্কার করলে সমস্যা কতটা মিটবে তা নিয়ে সন্দিহান বাসিন্দারা। বাসিন্দারাই জানান, মহানন্দা পাড়ের বাসিন্দাদের জলকষ্টের ছবিটা দু’দশকেরও বেশি পুরনো। ১৯৯২ সালে এলাকায় ভয়াবহ বন্যার পর থেকে আচমকাই এলাকার জলস্তর নেমে যায়। তারপর থেকেই সমস্যার শুরু। এবার টানা অনাবৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে গভীর নলকূপ বসালেই সমস্যা কিছুটা মিটতে পারে!

বলরামপুরের কথাই ধরা যাক। গত দু’দশক ধরেই পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বাসিন্দারা। প্রশাসনের সর্ব স্তরে লিখিত দাবি জানিয়েও কাজের কাজ না হওয়ায় একবার ভোট বয়কটও করেছেন। কিন্তু জলকষ্ট মেটেনি। গত সোমবার আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দিলীপ সরকার (৪০) নামে এক বাসিন্দার। এ ছাড়া অনেকেই আন্ত্রিকে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি পেটের সমস্যায় ভুগছেন বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে!

চন্দ্রপাড়া গ্রাম পন্চায়েতের স্থানীয় সিপিএম সদস্য ইয়াদ আলির অভিযোগ, এখানে গভীর নলকূপ জরুরি! কিন্তু পঞ্চায়েতের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। পঞ্চায়েত সমিতিকে জানিয়েও ফল হচ্ছে না। পানীয় জলের হাহাকারের একই চিত্র ওই ব্লকের মহদিপুর, কানাইপুর থেকে শুরু করে কাজলাদিঘি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। মহদিপুরেও গত শুক্রবার আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়ে নিরঞ্জন সরকার(৪২) নামে এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে!

মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মন্ডল বলেন, পুকুরের জল ব্যবহার করলে তো আন্ত্রিকের আশঙ্কা থাকবেই। কিন্তু এলাকায় জলের সমস্যা কী ভাবে মিটবে তা তো পঞ্চায়েত-প্রশাসনকে দেখতে হবে!

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মানজারুল ইসলাম চাঁচল-২ ব্লক এলাকারই বাসিন্দা। তাঁর দাবি, ‘‘এগুলো দেখার দাবি পঞ্চায়েত সমিতির। ওরা আমাদের কিছু জানায়নি।’’

তৃণমূল চালিত চাঁচল-২ পন্চায়েত সমিতির ত্রান কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য দাসের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি অনেক এলাকাতেই গভীর নলকূপ বসিয়েছে! কিন্তু জেলা পরিষদ তো কোনও সাহায্যই করছে না।’’

আর এই চাপানউতোরে গোটা ব্লক জুড়েই পানীয় জলের হাহাকার চলছেই। বলরামপুরের সুতপা মন্ডল, খেমপুরের আঞ্জুরা বিবি, মহদিপুরের বাসন্তী মল্লিকরা বলেন, একটু জলের জন্য সকাল হলেই ছুটে বেড়াতে হয়।

Chanchal Tube wells damaged water crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy