Advertisement
২০ মার্চ ২০২৩

বাংলা না জেনেও রবীন্দ্রগান রাজের

পাহাড়ি চা বাগানে ওই গান শুনে বাইরের যে কেউই চমকে যেতে পারেন। আরও চমকে যেতে পারেন স্বয়ং গায়ককে দেখে। তিনি রাজ লামা। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লকের চম্পাগুড়ির থালঝোরার এই নেপালি যুবক এক বর্ণও বাংলা বোঝেন না। কিন্তু তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতে মুগ্ধ রসিকেরা।   

মঞ্চে: মালবাজারে একটি অনুষ্ঠানে রাজ। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে: মালবাজারে একটি অনুষ্ঠানে রাজ। নিজস্ব চিত্র

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৮ ০২:২৫
Share: Save:

বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে আসছে চা বাগানের ভিতর থেকে। রোজকার মতোই। বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে!

Advertisement

পাহাড়ি চা বাগানে ওই গান শুনে বাইরের যে কেউই চমকে যেতে পারেন। আরও চমকে যেতে পারেন স্বয়ং গায়ককে দেখে। তিনি রাজ লামা। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লকের চম্পাগুড়ির থালঝোরার এই নেপালি যুবক এক বর্ণও বাংলা বোঝেন না। কিন্তু তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতে মুগ্ধ রসিকেরা।

বছর উনিশের রাজ সম্প্রতি মালবাজারে এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়ে মাতিয়ে দেন দর্শক-শ্রোতাদের। অনুষ্ঠানের পর অনেকেই কথা বলতে এগিয়ে আসেন ওর সঙ্গে কথা বলতে। এক শ্রোতা রাজের কাছে এসে প্রশ্ন করেন, “আপনারর বাড়িতে কে কে আছেন?” উত্তর দিতে পারেননি রাজ। আরও কিছু প্রশ্ন করা হলেও হাসিমুখে চুপচাপ ছিলেন তিনি। অবশেষে তাঁর এক সতীর্থ গায়িকা এসে শ্রোতাদের জানান, রাজ বাংলা জানেন না। ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতে পারেন মাত্র। সতীর্থ এসে রক্ষা করায় লাজুক হাসি তখন মালবাজার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজের মুখে। শ্রোতাদের মধ্যেও অবাক লাগা ঘোর। কারণ মঞ্চে কিছুক্ষণ আগেই সে অনায়াসে একের পর এক নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসঙ্গীতে তাঁদের চমকে দিয়েছেন। আর সে-ই কিনা এক বর্ণ বাংলা বলা তো দূর অস্ত, বুঝতেও পর্যন্ত পারেন না!

রাজ যে সত্যিই বাংলা জানেন না, তা স্পষ্ট করলেন ওঁর গানের শিক্ষক মালবাজারের চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, ‘‘বছর চারেক আগে রাজ নিজে থেকে মালবাজারে এসে আমার কাছে এসে গান শিখতে শুরু করেছিল। শুনে শুনে যে কোনও গান রপ্ত করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে ওর।’’ এই ব্যাপারটা প্রথম দিন রাজকে গান শেখাতে গিয়েই বোঝা গিয়েছিল বলেও জানান তিনি। মালবাজারের বর্ষীয়ান শিল্পী তথা রাজের গান শেখার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শম্ভু দত্ত বলেন , “খেয়াল, বন্দিশ, ভজন— যে কোনও গানই এক সপ্তাহের ভেতরেই বুঝে নিয়ে বারবার অনুশীলন করে সঠিক করে গাইতেও পারে রাজ। এই ক্ষমতাটা ওর আছে।” এই ক্ষমতার জোরে চার বছরের মধ্যেই পঞ্চম বর্ষের গানের পরীক্ষাও দেওয়া হয়ে গিয়েছে রাজের।

Advertisement

রাজের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, রাজ নিজেই বাংলা অক্ষর শিখে উচ্চারণ একপ্রকার মুখস্থ করে বেশ কিছু নজরুলগীতি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখে নিয়েছেন। রাজের প্রিয় গায়ক মান্না দে এবং কিশোর কুমার। রবীন্দ্রগানে পাহাড় সমতলের মধ্যে মেলবন্ধনের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান রাজ। বৃহস্পতিবার বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে রাজ ভাঙা হিন্দিতে বললেন, “নাগরাকাটায় আমার বাড়ি যাওয়ার পথে রবীন্দ্র-ভানু মোড় আছে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ এবং ভানুভক্ত দুই মনীষীরই মূর্তি পাশাপাশি বসানো। বাংলা এবং নেপালি সংস্কৃতির মেলামেশা তাই আজকের নয়। সেই জন্যেই আমি বাংলা গান গাইছি। দ্রুত ভাষাটাও রপ্ত করে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.