মরমী: অসমের সরকারি নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে মঙ্গলবার সভা জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল
অসমের সরকারি নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সারা দেশ জুড়েই নানা কর্মসূচি নিচ্ছে নানা সংগঠন। জাতীয় রাজনীতির বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও এখন এই ইস্যু। সেই বিতর্কে উত্তরবঙ্গের শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরাও এবার এগিয়ে এলেন নাগরিক পঞ্জিতে বাদ পড়া নাগরিকদের সমর্থনে। জলপাইগুড়িতে পাশে দাঁড়ানোর সেই সভা শুরু হল ভাওয়াইয়ার সুর দিয়ে। সভা শেষ হল সেইসব মানুষের হয়ে আইনি লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে।
অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ বাসিন্দার নাম বাদ গিয়েছে। এর প্রতিবাদে জলপাইগুড়িতে সভা ডেকেছিলেন শহরের একদল কবি, গায়ক, লেখক ও শিল্পী। এই সভা থেকেই মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় নতুন এক মঞ্চের। ‘ঐক্য সংহতি মঞ্চ’ নামে এই সংগঠন দ্রুত রাস্তায় নেমে এই বিষয়ে তাদের তরফে বার্তা দেবে বলে জানানো হয়। সভা শেষে মঞ্চের তরফে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নাগরিক পঞ্জি তৈরি হয়েছে। তাই প্রতিবাদ করার প্রশ্ন নেই। তবে নাম বাদ পড়া মানুষদের সঙ্গে সহমর্মিতা দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে। সেই সঙ্গে আরও মানুষজন যাতে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাগরিক পঞ্জিতে বাদ পড়া মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন সেই বার্তাও দেওয়া হয়।
এ দিনের সভার সভাপতি ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ। তিনি আবেগমথিত গলায় বলেন, ‘‘কোনও প্রতিবাদ বা পাল্টা হিংসা আমাদের পথ নয়। আমরা পাশে থাকার বার্তা দিতেই এক সঙ্গে জড়ো হয়েছি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। যাঁদের নাম নাগরিক তালিকায় নেই তাঁদের নাগরিক অধিকার দেওয়ার আর্জি জানাব।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভাওয়াইয়া শিল্পী নজরুল হক। ছিলেন ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা উমেশ শর্মা, চিত্রশিল্পী নীহার মজুমদার-সহ বহু বিশিষ্ট ও সহমর্মী ব্যক্তি। নজরুল হক বলেন, ‘‘যাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তাঁদের আমরা চিনি না। তবে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সকলেই তাঁদের আত্মীয়। সে কারণেই আমরা আইনের পথে যাচ্ছি।’’
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাঘরে এ দিন দুপুর আড়াইটে থেকে সভা শুরু হয়। সভার শুরু হয় ভাওয়াইয়া গান দিয়ে। ভাওয়াইয়া শিল্পী জহর রায় গান ধরেন, ‘‘বন্ধু, হিংসা সর্বনাশা/আমরা হইলাম মানুষ, মানুষে ভরসা/প্রেম বড় ধন...।’’ চিত্রশিল্পী নীহার মজুমদারের কথায়, ‘‘আমাদের অস্ত্র হল ভালবাসা। তাই এটা প্রতিবাদী নয়, মানবিক সভা।’’
মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে, এ দিন একটি প্রাথমিক কমিটি গড়া হয়েছে মাত্র। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শহরের বিভিন্ন সৃজনশীল পেশার সঙ্গে যুক্ত এবং আরও বিশিষ্টজনেদের যুক্ত করা হবে। কলেজ পড়ুয়া, গবেষকদের নিয়ে সভা করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। অসমের নাম বাদ পড়া বাসিন্দাদের পাশে থাকার বার্তা দিতে শহর এবং জেলায় কনভেনশন, গান-বাজনা, ছবি আঁকার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ঐক্য সংহতি মঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy