কোচবিহারে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র।
দেশের মূল ভূখণ্ডের আওতাধীন হওয়া ছিটমহলের বাসিন্দাদের আইনি সাহায্য দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। রবিবার কোচবিহারে রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ওই ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান। মহিলা তৃণমূলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ দিন কোচবিহারে আসেন সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী তথা রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা স্বীকৃতিও পেয়েছেন। সকলে সমস্ত সুযোগ সুবিধে পাবেন।” ওই প্রসঙ্গের সূত্র ধরেই রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী ছিটমহলের মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে মহিলা পরিচালিত থানা তৈরির বিষয়েও চিন্তাভাবনার কথা জানান। আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যে ৩০টি মহিলা থানা হয়েছে। ছিটমহলেও একটি মহিলা থানা তৈরির কথা ভাবা হবে। সরকার পাশে রয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রেও জানা গিয়েছে, ছিটমহলগুলিকে বিভিন্ন থানা এলাকার সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ অগস্ট সবকটি ছিটমহলে প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে একযোগে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। তার পর থেকে ছিটমহলগুলিতে পুলিশ ও বিএসএফের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক আইনের শাসনের আওতার বাইরে থাকায় ওই সব এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে খামতি রাখতে চাইছেননা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। ওই সব ছিটমহলের বেশিরভাগ দিনহাটা,সিতাই থানা লাগোয়া। মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জ থানা লাগোয়া এলাকাতেও বেশকিছু ছিটমহল রয়েছে। এখন সেখানকার জনসংখ্যা ১৪, ৮৫৪ জন। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়া ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ৯৮০ জন বাসিন্দা এ দেশে আসবেন। ওই বাসিন্দাদের বর্তমান লাগোয়া থানার আওতায় আনার পরিকল্পনা হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “আইনের শাসন না থাকায় ছিটমহলগুলি ঘিরে নানা অপরাধ মূলক কাজ চলত বলে বিস্তর অভিযোগ ছিল। ওই চক্র যেন নতুন করে এতটুকু সুযোগ নিতে না পারে সেজন্যই এমন বাড়তি তৎপরতা।”
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির কর্তারাও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব ও আইনের শাসন না থাকায় ছিটমহলের মেয়েদের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। পরিচয়পত্র না থাকায় বিয়ে ভেঙে যাওয়া, বধূ নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে না পারার অসংখ্য উদাহরণ সংশ্লিষ্ট ছিটমহল এলাকাগুলিতে বহুদিনের সমস্যা। ছিটমহল বিনিময়ের রেশ কাটতে না কাটতে সেখানকার বাসিন্দাদের আইনী সাহায্য দেওয়ার উদ্যোগ ইতিবাচক। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আইনি উপদেষ্টা আহসান হাবিব বলেন, “আইনি বিষয় তো বটেই অন্য ব্যাপারেও প্রশাসনের সমস্ত ইতিবাচক উদ্যোগে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।” নাটাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছে। এলাকার পরিকাঠামো ও বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নও হবে।”
রবিবার কোচবিহারে এসে ছিটমহল ইস্যুতে সরব হন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। কোচবিহারে দলের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে বিমানবাবু ছিটমহল বিনিময়ে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের কৃতিত্বের দাবিও খারিজ করে দেন। রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “২০১১ সালে মনমোহন সিংহের আমলেই চুক্তি হয়ে যেত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির জন্য সেটা হয়নি।” ছিটমহলের বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। বিমানবাবু বলেন, “নতুন করে যুক্ত এলাকাগুলি অনুন্নত, দরিদ্রদের বসবাস। সকলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। রাজ্য সরকারেরও অবশ্য ওই কাজের দায়িত্ব রয়েছে।” কেন্দ্র ছিটমহলের পুর্ণগঠন ও উন্নয়নে বরাদ্দ কমিয়ে ৫০ কোটি করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাজ্য ও কেন্দ্রকে করতে হবে। ৩,৮০০ কোটি টাকা গত বছর নির্দিষ্ট হয়েছিল। এখন ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এটা অদ্ভুত ব্যাপার। অথচ অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য শোনা যায়নি।” এ দিন সাংবাদিক বৈঠকের আগে জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক করেন বিমানবাবু। বিকালে একটি কর্মীসভাতেও যোগ দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy