Advertisement
E-Paper

খাসতালুকেই ভোটের দিন কাটালেন মন্ত্রী

মোবাইল এগিয়ে দিলেন আপ্ত সহায়ক। ওপারের কথা শুনে, শক্ত হল মন্ত্রীর চোয়াল। সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন—‘দেখছি’। কথা শেষ করার পরক্ষণেই ফের বাজল মোবাইলের রিং। চুপচাপ কথা শুনে, মোবাইলটি ধরিয়ে দিলেন আপ্ত সহায়ককে। নির্দেশ দিলেন, ‘‘ওকে আইসির নম্বর দিয়ে দাও, অভিযোগ জানাক।’’ এবার তিনি-ই ফোনে ধরলেন দলের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্বে থাকা এক নেতাকে। ফোনে মন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়াবাড়ি করছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সব অভিযোগ জানাতে হবে।’’

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৪

মোবাইল এগিয়ে দিলেন আপ্ত সহায়ক। ওপারের কথা শুনে, শক্ত হল মন্ত্রীর চোয়াল। সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন—‘দেখছি’। কথা শেষ করার পরক্ষণেই ফের বাজল মোবাইলের রিং। চুপচাপ কথা শুনে, মোবাইলটি ধরিয়ে দিলেন আপ্ত সহায়ককে। নির্দেশ দিলেন, ‘‘ওকে আইসির নম্বর দিয়ে দাও, অভিযোগ জানাক।’’ এবার তিনি-ই ফোনে ধরলেন দলের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্বে থাকা এক নেতাকে। ফোনে মন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়াবাড়ি করছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সব অভিযোগ জানাতে হবে।’’

ফোন বেজেই চলেছে, মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের হাতে থাকা নোট বইতে, তখন একের পর এক ওয়ার্ডের নম্বর উঠছে, ১৪, ৯, ২৮, ৮, ২। বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থী-কর্মীদের থেকে একের পর এক আর্জি-অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এ দিকে, তাঁর ভোট দেওয়ার ছবি তুলতে অপেক্ষায় ছিল অন্তত ডজনখানেক সংবাদমাধ্যমের স্টিল এবং টিভি ক্যামেরা। সকাল ৯টা নাগাদ বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার লাইনে দাঁড়ালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

ভোট চলাকালীন বেশির ভাগ সময়টা নিজের ‘ওয়ার্ডে’ই কাটিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলে নিজের ভোটটা দিয়ে সেখানেই কখনও স্কুটারের উপর, কখনও বা বারান্দায় বসে ছিলেন তিনি। ভোট দিতে আসা পরিচিতদের দেখে কুশল বিনিময় করেছেন, কর্মী সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন। গার্লস স্কুল ছাড়াও, শিলিগুড়ির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকটি ভোট কেন্দ্র বয়েজ স্কুলেও অনেকটা সময় কাটিয়েছেন মন্ত্রী তথা ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। এবারে ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় গৌতমবাবুর স্ত্রী শুক্লাদেবী তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। নিজের ‘খাস তালুকে’ ভোটের দিনে বেশি সময় কাটানোয় কৌতুহলী হয়েছেন মন্ত্রীর পরিচিতরাও। তবে, ওয়ার্ডে ভোটের দায়িত্বে থাকা এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘প্রচারের বেশি সময়টাই শিলিগুড়ির বাকি ৪৬টি ওয়ার্ডে মিছিল-পদযাত্রা, নাগরিক সভায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে মন্ত্রীকে। নিজের ওয়ার্ডে বেশি সময় কাটাতে পারেননি।’’

নিজের ওয়ার্ড ছেডে ভোট চলাকালীন ১৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গিয়েছিলেন। এই দু’টি ওয়ার্ডে মন্ত্রীর যাওয়ার কারণ নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যাও করেছেন দলের কর্মীদের একাংশ। এবারের পুরভোটে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই এবার গৌতমবাবু নিজে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, পরে দলের নির্দেশে তিনি সরে দাঁড়ান। দিনকয়েক ওয়ার্ডে প্রচারও করেছিলেন। এই ওয়ার্ড থেকেই ভোটে লড়ছেন একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ ঘোষ। তিনি নিজে যে ওয়ার্ডে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, সেই ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী হারলে মন্ত্রীর কাছে তা ‘অস্বস্তি’র হতে পারে বলে অনেকের দাবি। অন্য দিকে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। যাঁকে সিপিএম ‘নজির’ ভেঙে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই ওয়ার্ডে নিজের দলের ‘সাফল্য’ নিয়েও মন্ত্রী যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বলে কর্মী-সমর্থকদের দাবি।

এ দিন সকাল থেকে কখনও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে শসা খেয়েছেন তিনি। কখনও বারান্দার রোয়াকে বসে আড্ডাও দিয়েছেন। কর্মীদের সকলে টিফিনের প্যাকেট পেলেন কিনা তারও তদারকি করেছেন। কখনও, সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে হাতের আঙ্গুল তুলে হাসি মুখে ‘ভি’ দেখিয়েছেন। কখনও আবার সংবাদপত্রের উপরে গোঁসাও করেছেন। বিরোধীদের থেকেও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে এবারের ভোটে ‘মূল প্রতিপক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ভোটের সকালটা মন্ত্রীর শুরু হয়েছিল বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকদের কাছে অভিযোগ শুনে। দিনের শেষে তিনি নিজেই সে সব অভিযোগ করেছেন। বললেন, ‘‘কয়েকটি ওয়ার্ডে বিরোধীরা অশান্তি, বুথ দখল, রিগিঙের চেষ্টা করেছে।’’ আবার পর ক্ষণেই বলেছেন, ‘‘কুৎসা, অপপ্রচার রুখে তৃণমূল শিলিগুড়ি পুরসভায় একক গরিষ্ঠতা পাবে।’’ অভিযোগ-দাবি মিলিয়ে গৌতমবাবুর মেজাজও ছিল শিলিগুড়ির আকাশের মতোই। কখনও রোদের দেখা মিলেছেন, কখনও বা মেঘে ঢাকা, গুমোট।

goutam deb election day anirban roy siliguri corporation election 2015 siliguri poll day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy