বাসিন্দাদের কথা শুনছেন মন্ত্রী। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
সোমবার দুপুরে মানিকচকের সাহেবনগরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে কাছে পেয়ে তাঁর দফতরেরই একটি রাস্তার কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুললেন গ্রামবাসীরা।
একেবারে প্রত্যন্ত ওই গ্রামে খোদ গ্রামবাসীদের কাছ থেকেই সরাসরি অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সেই নির্মীয়মাণ রাস্তা খুঁড়ে মাপজোক করতে নির্দেশ দেন। আদেশ পেয়ে কিছুটা দূরেই রাস্তার তিন জায়গা খুঁড়ে ফিতে লাগিয়ে মাপজোক করা শুরু করলেন ইঞ্জিনিয়াররা। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দাঁড়ালেন। ইঞ্জিনিয়াররা তাঁকে জানালেন, এই রাস্তার পাথর-বালির ঘনত্বের পরিমাণ ৫ ইঞ্চি থাকার কথা থাকলেও, কোথাও রয়েছে ৪ ইঞ্চি বা কোথাও সওয়া বা সাড়ে চার ইঞ্চি। চটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বললেন, ‘‘কাজ কিন্তু ঠিকঠাক বুঝে নিতে হবে এবং কাজ শেষে ইঞ্জিনিয়ারের রিপোর্ট পেশের পরই বিল পেমেন্ট হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তারপর যদি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তবে কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ পাশাপাশি, সমস্ত কাজের শুরু ও শেষ অংশে সেই কাজের বোর্ড ঝুলিয়ে রাখারও নির্দেশ দেন তিনি। আর, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তাঁর কড়া বার্তা, ‘‘কোনও প্রকল্পের কাজ যদি নিম্ন মানের হয় তবে জরিমানা করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।’’
এ দিন মন্ত্রী ওই রাস্তার কাজ সহ মানিকচক ব্লকের ভূতনিতে ফুলহার নদীর ওপর নির্মীয়মাণ সেতু, মানিকচক কলেজের ভবন, কালিয়াচকের সুজাপুরে পলিটেকনিক কলেজের ভবন নির্মাণের কাজও পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া জেলায় দফতরের যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ চালু রয়েছে, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে পুরাতন সার্কিট হাউজে মন্ত্রী একটি পর্যালোচনা বৈঠকও করেন। এদিকে, এদিন মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, মঙ্গলবাড়িতে মহানন্দা নদীর ওপর আরও একটি সেতুর দাবি জানায়।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এ দিনই প্রথম মালদহ জেলায় আসেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এ দিন সকালে তিনি গৌড় এক্সপ্রেসে এখানে আসেন। স্টেশনে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব। সকাল ১০টাতেই দফতরের সচিব বরুণ রায়, জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে তিনি মানিকচক রওনা হন। প্রথমে তিনি যান মানিকচক কলেজের নির্মীয়মাণ ভবন পরিদর্শনে। প্রায় ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই কাজটি হচ্ছে। প্রথমেই তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে জানতে চান, কাজ কবে শেষ হবে? ঠিকাদার জানিয়ে দেন, আরও তিন মাস সময় লাগবে। মন্ত্রী আড়াই মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করতে বলেন।
পরিদর্শন শেষে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রদ্যুত ঘোষ বলেন, কলেজের ভবন তৈরির কাজ ঢিমেতালে চলছে। আড়াই বছর কেটে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে একটি মডেল স্কুলে কলেজের পঠন-পাঠন চলছে। এ বছর কলেজে ভর্তির জন্য ৪ হাজার ছাত্রছাত্রী অনলাইনে আবেদন করেছে। ফলে নতুন ভবন তৈরির কাজ শেষ না হলে সমস্যা বাড়বে। মন্ত্রী অবশ্য আগামী আড়াই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এরপরই মন্ত্রী যান ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ ভূতনিতে ফুলহার নদীর ওপর সেতু তৈরির কাজ দেখতে। কাজের অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা বলেন, ৪৫টি পিলারের মধ্যে ৪৩টির কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা শেষ হতে ডিসেম্বর মাস লেগে যাবে। মন্ত্রী শংকরটোলা ঘাটে দাঁড়িয়েই সেতুর কাজ দেখেন। এরপর ৬ কোটি ৫ লক্ষ ২০ হাজার ৮২৪ টাকা খরচ করে নির্মীয়মাণ বাবলাবোনা-বিষ্ণুপুর শংকর মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরির কাজ দেখতে সাহেবনগর গ্রামে যান মন্ত্রী। সেখানেই ওই রাস্তার কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন এলাকার বাসিন্দা রেজাউল হক সহ অন্যরা। রেজাউল সাহেবের অভিযোগ, এই রাস্তার কাজ কত টাকার, কোন কোন সামগ্রী কী পরিমাণ ব্যবহার হবে, তার কোনও বোর্ড বা তালিকা নেই। মন্ত্রী অভিযোগ শুনেই রাস্তা খুঁড়ে কাজের মাপজোক করতে বলেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি সুজাপুরে নির্মীয়মাণ পলিটেকনিক কলেজ ভবন তৈরির কাজ দেখেন। মন্ত্রী বলেন, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ হবে। কোনও কাজেই অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy