তলবি সভার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ‘বিক্ষুদ্ধ’ পুর প্রতিনিধিদের পাশে বসিয়ে তুফানগঞ্জের পুরপ্রধান কৃষ্ণা ঈশরের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ঘিরে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেটার কথা ঘোষণা করল তৃণমূল। শুক্রবার কোচবিহারে দলের জেলা দফতরে তুফানগঞ্জ পুরসভার ১২ জন পুর প্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। দলের অন্দরের খবর, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই তড়িঘড়ি ওই বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে দলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ওই অনাস্থা যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ভাল ভাবে দেখছেন না, সেই বার্তাও দেওয়া হয়। তার পরেই ‘রণে ভঙ্গ’ দিয়ে পুরপ্রধান হিসেবে কৃষ্ণায় আস্থার কথা জানান ‘বিক্ষুব্ধেরা’।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই দলের কোচবিহার জেলা দফতরে সমস্ত পুর প্রতিনিধিদের পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। সেখানে তিনি বলেন, “এই নিয়ে চতুর্থ বার পুর প্রতিনিধিদের নিয়ে বসেছি। ১২ জনই আছেন। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। সমস্যা মিটে গিয়েছে। কৃষ্ণা ঈশরই চেয়ারম্যান আছেন, থাকবেন।”
সাংবাদিক বৈঠকে জেলা সভাপতি আরও বলেছেন, “সর্ব্বোচ নেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে আমাদের সকলের এক সঙ্গে চলতে হবে।” এ দিন কোচবিহার জেলা তৃণমূল দফতরে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণা ঈশর নিজেও বলেছেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেল। আমরা খুশি।”
গত ১৭ জানুয়ারি তুফানগঞ্জ পুরসভার ১২ জন পুর প্রতিনিধির মধ্যে ১০ জন তৃণমূল পুর প্রতিনিধি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। বৃহস্পতিবার তলবি সভা হয়। পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার দাবিও করা হয় বিক্ষুদ্ধদের তরফে। দলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য ওই বক্তব্য মানতে চাননি। সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল পুর প্রতিনিধি অনন্ত বর্মাও বলেন, “শুধুমাত্র তলবি সভা করেছি।” সেখানে তুফানগঞ্জ পুরসভার তৃণমূল পুর প্রধান সুধাংশু শেখর সাহাও দাবি করেন, “জেলা সভাপতির নেতৃত্বে ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে।”
যদিও দলেরই একটি সূত্রের দাবি, দলের নির্দেশ মেনে পুরপ্রধানের প্রতি আস্থার কথা জানালেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ আনার দাবিতে অনড় থাকার কথাও বৈঠকে জানান বিক্ষুদ্ধেরা। এক প্রবীণ পুর প্রতিনিধি দাবি করেন, ওই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। ওই ব্যাপারে অবশ্য দলের জেলা নেতৃত্বের তরফে কোনও বক্তব্য মেলেনি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)