বন্দিদের হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে মোবাইল ফোন। একটু এদিক-ওদিক লক্ষ্য রেখে কেউ কথা সেরে নিচ্ছেন বাড়ির লোকের সঙ্গে। আবার কেউ ফোনে কথা বলেই সারছেন প্রয়োজনীয় কাজ। চার দেওয়াল কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। কোচবিহার সংশোধনাগারে এমনই হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন কয়েক আগেই জেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই স্বীকার করেছিলেন জেলে গাঁজা, মদ ঢুকে যাচ্ছে। বিস্কুটের প্যাকেটের আড়ালে তা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মদের বোতল উদ্ধারও হয়। শুধু তাই নয়, জেলে বসে কিছু বন্দি তোলাবাজি করছে বলেও অভিযোগ ওঠে। নতুন বন্দিদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি চক্র কাজ করছে। কোচবিহার জেলা সংশোধনাগারের সুপার রাজীব রঞ্জন বলেন “ইতিমধ্যেই আমরা কিছু ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে বাকি কাজ করব।”
জেল সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে ওই জেলের সুপার বদলি হয়। কোচবিহার সেন্ট্রাল জেলের জেলার রাজীববাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই পাঁচ সাজাপাপ্ত কয়েদিকে সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দি জেলে তোলাবাজির মাথা হয়ে বসেছিল বলে অভিযোগ। ওই বন্দি একাধিক অন্য বন্দিকে নানা ভাবে ভয় ও সুযোগ-সুবিধে দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা তুলতেন। তা নিয়ে জলপাইগুড়িতে বসেই অভিযোগ পান জেলার। সেন্ট্রাল জেলে বদলি হওয়া দুই বন্দি দশ হাজার টাকা করে তোলা দিতে বাধ্য হয়েছে বলে সেই সময় রাজীববাবুকে জানায়। রাজীববাবু কোচবিহারে দায়িত্ব নিয়েই তদন্ত শুরু করেন।
অভিযোগ, বন্দিদের কয়েকজন ছক কষেই জেলে মদ, গাঁজা ঢোকানোর ব্যবস্থা করছে। তাদের কাছেই রয়েছে মোবাইল ফোন। অন্তত দশটির বেশি ফোন সংশোধনাগারের ভিতরে রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই ফোনের মাধ্যমেই নতুন বন্দিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়িতে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে জেলে বসেই ব্যবসার কাজ সারছেন বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যেই জেল কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি এসেছে। তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
দিন কয়েক আগেই ওই জেলে সুপারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে রাতের খাবার বয়কট করেন বন্দিরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, নিম্ন মানের খাবার নিয়ে অভিযোগ করাতে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এমনকি কেউ অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও দাবি করেন তাঁরা। সেই সময় জেল সুপার জানিয়েছিলেন, জেলে গাঁজা, মদ ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তা নিয়েই অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। সেই সময় জেল পরিদর্শক খোকন মিয়াঁ সেখানে যান। তিনি বলেন, “বেআইনি কাজ হলে জেল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি বন্দিরা যে অভিযোগ আগে তুলেছিলেন, তেমনটা যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”