সঙ্গীতা কুণ্ডু নিখোঁজের পরে ৪ মাস হতে চলেছে। গোড়ায় শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানা ও ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট তদন্ত করে নিখোঁজের হদিশ করতে পারেনি। প্রায় এক মাস আগে তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সিআইডি-ও সঙ্গীতার কোনও হদিশ এখনও পায়নি। সিআইডি-র পক্ষ থেকে এক অফিসার দাবি করেন, ধৃত জিম মালিক পরিমল সরকার তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে নানা সমস্যা হচ্ছে। যদিও ধৃতের আইনজীবী অত্রি শর্মা দাবি করেছেন, তাঁদের মক্কেল আগাগোড়া তদন্তে সহযোগিতা করছেন।
সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী ও আত্মীয়-স্বজনদের অনেকের বক্তব্য, এত দিন পর্যন্ত যা তদন্ত হয়েছে, তাতে তাঁরা খুশি নন।
ঘটনাচক্রে, আজ, সোমবার জলপাইগুড়ি আদালতে ফের সঙ্গীতা অপহরণ মামলার শুনানি হওয়ার কথা। সেখানে ধৃত জিম মালিক পরিমলবাবু সহ ৪ জনকে হাজির করানো হতে পারে। ওই তরুণীর দাদা শম্ভুবাবু বলেন, ‘‘আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে যে ভাবে তদন্ত চলছে, তাতে নানা আশঙ্কা হচ্ছে। কখনও থানার দু’জন অফিসার বোন টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছেন। কখনও পরিমলবাবুর নামে এফআইআর করতে গিয়ে আপত্তির মুখে পড়েছি। তাই কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছি। বিচার বিভাগের উপরে আমাদের পুরো আস্থা রয়েছে।’’
সিআইডি সূত্রে দাবি করা গিয়েছে, গ্রেফতার করার পরে জেরার সময়ে পলিগ্রাফ টেস্ট এবং ব্রেন ম্যাপিঙে সম্মতি দিয়েছিলেন মূল অভিযুক্ত পরিমলবাবু। পরে আদালতে গিয়ে বেঁকে বসেন পরিমলবাবু। সিআইডি-র আরও দাবি, পরিমলবাবু তথ্য গোপন করছেন। ইতিমধ্যেই সঙ্গীতার পাসপোর্ট ছিল কি না, সেই ব্যাপারে জানতে চেয়ে কলকাতার আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরে আবেদন করেছে সিআইডি।
গত ১৭ অগস্ট থেকে ওই সংস্থার সেবক রোডের ফ্ল্যাট থেকে সঙ্গীতা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তার পর ২৬ অগস্ট পরিমলবাবু থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। সেই সময়ের মাঝে পরিমলবাবু ব্যবসার কাজে হায়দরাবাদ গিয়েছিলেন বলে জেরায় দাবি করেছিলেন। এর পরে পরিমলবাবু কয়েকদিনের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন। ধৃত পরিমলবাবু সহ বাকি চারজনের আইনজীবী অত্রি শর্মা বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাদের মক্কেলদের ধরা হয়েছে। ফের সকলের জামিনের আবেদন করা হবে।’’ মামলার সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘নিখোঁজ তরুণী এখনও উদ্ধার হননি৷ তাই কেউ জামিন পেলে তদন্তে কী ভাবে, কেন প্রভাব পড়তে পারে তা আদালতেই জানাব।’’
সিআইডির দাবি, গত ১৫ অগস্ট পরিমলবাবু ও সঙ্গীতা দেবীর মোবাইল ফোনের ‘টাওয়ার লোকেশন’ সেবক এলাকায় ছিল বলে জানা গিয়েছে। সিআইডির সন্দেহ, হয় দুজনে সে দিন সেবকে গিয়েছিলেন, না হলে দুজনের মোবাইল ফোন কোনওভাবে সেবকে ছিল। পুলিশ ও সিআইডির কয়েকজন অফিসারের সন্দেহ, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে অনেক সময় নিখুঁত ছক কষা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে আরও সময় দরকার বলে সিআইডি-র এক অফিসার জানান। কিন্তু, নিখোঁজের দাদার প্রশ্ন, ৪ মাস ধরে তদন্ত চললেও সঙ্গীতার পাসপোর্ট ছিল কি না, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করেনি কেন সেই প্রশ্নও আদালতে ওঠা দরকার। ধৃতদের একজন তপন দে অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷