ভয়াল: তলিয়ে যাওয়ার আগে জিতেন বিশ্বাসের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
গঙ্গা ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে আতঙ্কে দরজা-জানালার কাঠের ফ্রেম আগেই খুলে নিয়েছিলেন। ঘরের আসবাব সরিয়ে নিয়ে গ্রামেরই একটি রাস্তার পাশে তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে সেই তাঁবুতেই কাঁটছিল পার অনুপনগরের বাসিন্দা জিতেন বিশ্বাসের। শনিবার সকালে গঙ্গা গিলে নিল তাঁর সাধের পাকা বাড়িই। সব হারিয়ে এখন এই জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় গিয়ে থাকতে চান তিনি।
এ দিন তাঁরই প্রতিবেশী শ্রীহরি সন্ন্যাসীরও পাকা বাড়ির অনেকটা গ্রাস করে গঙ্গা। বাকিটাও তলিয়ে যাওয়ার মুখে। এ দিন এলাকার বেশ কিছু আবাদি জমিও চলে গিয়েছে সেই গঙ্গায়। দুপুরে সেই পার অনুপনগরেই গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান মালদহের মহকুমাশাসক পার্থ চক্রবর্তী। ছিলেন কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিও-ও।
অগস্টের শুরু থেকেই ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন চলছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর পঞ্চায়েতের পরানপাড়া, পার অনুপনগর, পার মণ্ডলপাড়া, পারলালপুর এলাকায়। এরমধ্যে শুধু পার অনুপনগরেই এ কয়েকদিনে অন্তত ১৫টি ঘরবাড়ি গঙ্গা ভাঙনে বিসর্জন গিয়েছে। এ ছাড়া আতঙ্কে অন্তত ৫০টি পরিবার তাঁদের ঘরবাড়ি নিজেরাই ভেঙে সরিয়ে নিয়েছেন। আবাদি জমিও প্রতিদিন গিলছে নদী। ভাঙনের একেবারে দোরগোড়ায় পার অনুপনগর প্রাইমারি স্কুলের ভবনটিও। কিছুদিন আগে স্কুলটিকে বাঁচাতে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করে সেচ দফতর। এখনও সেই কাজ জারি চলছে ও আপাতত গঙ্গা গ্রাস করতে পারেনি স্কুলভবনকে।
জিতেনবাবুর ছেলে ছেলে সঞ্জয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। বাড়িতে তিনি দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। গ্রামেই কয়েক বছর আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে পাকা একতলা বাড়ি করেছিলেন তিনি। গঙ্গার পাড় থেকে বাড়ি অনেকটা দূরে থাকায় বাড়ি ভাঙার চিন্তাই মাথায় আনেননি। কিন্তু এ বার গঙ্গা ভাঙতে ভাঙতে তাঁর বাড়ির দিকেই ধেয়ে আসে। আতঙ্কে কিছুদিন আগে সেই বাড়ির জানালা ও দরজার ফ্রেম সব খুলে নেন। কিন্তু নিজস্ব আর কোনও জমি না থাকায় গ্রামেরই রাস্তার পাশে ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে সেখানে আসবাব রেখে সকলে থাকতে শুরু করেন। এ দিন তাঁর পাকা বাড়ি গিলে নিল গঙ্গাগর্ভে চলে যাওয়ার পর দিশাহারা জিতেনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এই জেলাতেই আর থাকব না। অন্য জেলায় গিয়ে কোনওরকমে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করব। ছেলেকেও তা বলেছি।’’
এ দিন ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’’ সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণব সামন্ত বলেন, ‘‘আমরা স্কুলটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy