হাল্কা মেজাজে সুখবিলাস।—নিজস্ব চিত্র
কাজ না থাকলে, সংখ্যারা তাড়া করে। তাই তিনি দোতারা বাজিয়ে গুনগুন করেন, নতুন গান বাঁধেন। তবু উৎকন্ঠা কাটে না। তাই দলের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ডেকে দফায় দফায় আলোচনা করেন। নতুন নতুন কাজও খুঁজে নেন। ভোট গণনার সপ্তাহখানেক আগেই কাউন্টিং এজেন্টদের ‘মেনু’ ফাইনাল করে ফেলেছেন সুখবিলাস বর্মা। কর্মীদের আবদার শুনে জলখাবারের মেনুতে রাধাবল্লভী, সবজি, ডিমের সঙ্গে মিষ্টিও রেখেছেন। দুপুরের খাবারের প্যাকেটে ফ্রায়েড রাইস, সব্জি, মুরগি কষার অর্ডার দিয়েছেন। কাউন্টিং এজেন্ট থাকবে পঁচিশ জন, কিন্তু খাবার আসবে প্রায় দু’শো জনের জন্য। গণনাকেন্দ্রের সামনে বুথ অফিস তৈরি করবে কারা, তাও ঠিক করেছেন। জলপাইগুড়ির কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাসবাবুর কথায়, ‘‘সব তৈরি। এবার শুধু গণনার দিন-টা তাড়াতাড়ি এলেই হয়।’’
নিজের ভোট মেটার পরে বেশ কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গ এবং কোচবিহারে ভোট প্রচার করে জলপাইগুড়ি ফিরেছিলেন সুখবিলাসবাবু। মাস দু’য়েকের ছোটাছুটি, পরের পর সভায় বক্তব্য—বিশেষ করে চড়া রোদে টানা পদযাত্রায় বেশ ক্লান্তই হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পিচ রাস্তা, মোরাম রাস্তা, কাঁচা রাস্তা এমনকী খেতের আল ধরে হেঁটে দুই পা-ও মাঝে মধ্যেই টনটন করত প্রাক্তন আইএসএস অফিসারের। ভেবেছিলেন ভোটের পরে ক’টা দিন একটু শুয়ে বসে কাটাবেন। কিন্তু কোথায় কী, দুপুরে খাওয়ার পরে একটু বিছানায় গড়াতে গেলেই ঘুম আসার আগে নাকি সংখ্যারা তাড়া করে। জোটের ভাগ্যে ম্যাজিক সংখ্যার শিকে ছিঁড়বে তো।
নিজে হিসেব করেছেন, অন্তত ১৬০টি আসন বিরোধী জোটের ঘরে আসা উচিত। তবে উৎকন্ঠাও রয়েছে। যদিও জোট ১৪৮ এর ম্যাজিক সংখ্যা না পেরোতে পারে। সুখবিলাসবাবু বললেন, ‘‘আমার নিজেকে নিয়ে কোনও টেনশন নেই। তবে জোট কত আসন পাবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। মনের মধ্যে মাধ্যে মধ্যেই কত সংখ্যা আনাগোনা করে।’’ সুখবিলাসবাবু বলেন বটে, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানালেন, জলপাইগুড়ি আসনের ফল কী হবে, তা নিয়েও টেনশন মাঝে মধ্যে চেপে বসে। বাড়িতে ঘন ঘন কর্মী-সমর্থকদের আসা-যাওয়া লেগেই আছে। পার্টি অফিসে দেখা হলেই, কেউ বলেছেন, ‘‘এলাকায় ভাল ভোট হয়েছে, লিড আমাদের,’’ কেউ বা শুনিয়েছেন, ‘‘ওরাও ভাল ভোট করেছে।’’ কারও কথায় আবার আশঙ্কার ছাপ, ‘‘ওই পাড়ার লোকগুলো কথা শুনল না।’’ জেলা কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘যে যার মতো এসে মনগড়া সব আশঙ্কা শোনায়। এ সব শুনলে শুধুই রক্তচাপই বাড়ে।’’ সে কারণেই গত বুধবার কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে ফিরেই কর্মী-সমর্থকদের ডেকে একপ্রস্ত বৈঠক করেছেন সুখবিলাসবাবু। তবে টেনশন কাটানোর উপায়ও বের করেছেন তিনি নিজেই।
সংখ্যার তাড়না লেখার কাজও এগিয়ে দিয়েছে। আলোচনা, জল্পনা শেষ হলে বই লেখার কাজ এগিয়ে রাখছেন। পঞ্চানন বর্মার জীবন নিয়ে ইংরেজিতে একটি বই লেখা শুরু করেছিলেন বেশ কিছু দিন আগে। কাজের ফাঁকে লেখার সময় পাননি। এখন প্রতিদিন লিখছেন। তবে গানই তাঁর অন্যতম টেনশন মুক্তি। সেও যদি ‘দিদি’কে নিয়ে লেখা গান হয়। ভোট প্রচারের সময় লেখা একটি গান শুনিয়ে জনসভায় হাততালি পেয়েছিলেন দেদার। গানের কলিতে ছিল, ‘‘দিদি শিক্ষা তোমাকে দেব/ছেড়ে দেব না/ছেড়ে দিলে, সোনার বাংলা/তুমি আস্ত রাখবে না।’’ সুখবিলাসবাবুর কথায়, ‘‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব গানের সুরে গানটি গাইতাম। ভোটের প্রচারে এই গানের খুব কাটতি হয়েছিল। প্রচুর হাততালি পেয়েছিলাম।’’ যখনই সংখ্যার তাড়ায় টেনশন হয়, তখনই দোতারার সুরে গানের কলি ভাঁজতে থাকেন। জনসভার সেই হাততালিও যেন শুনতে পান। তাতেই নাকি চাপ কমে সুখবিলাসবাবুর।
কর্মী-সমর্থকদের দাবি, জোট সরকার এলে সুখবিলাসবাবুর মন্ত্রী হওয়া প্রায় পাকা। তাঁর হাতে কোনও দফতর আসতে পারে তা নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকরা চর্চাও শুরু করে দিয়েছেন। সেই চর্চা চলছে সুখবিলাসবাবুর জলপাইগুড়ির নতুন পাড়ার ফ্ল্যাটের ড্রইংরুমে। সুখবিলাসবাবুর ছায়াসঙ্গী কংগ্রেস কর্মী শুভ্রজিত দাসের কথায়, ‘‘দাদা কিন্তু এ সব চর্চায় নেই। আমরা মন্ত্রীত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও দাদা শুধু মুচকি হাসেন।’’
সুখবিলাসবাবু এ দিন প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেললেন। বললেন, ‘‘আরে সে সব তো দেরি আছে।’’ তবে গত লোকসভা ভোটেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে। এবারে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেরাও রয়েছে জোটে। কিন্তু কর্মী-সমর্থকদের একাংশের জল্পনা, দলের নিচু তলার কর্মীদের অনেকেই নানা কারণে ক্ষুব্ধ। গত বিধানসভায় সুখবিলাসবাবুর হয়ে ভোট করিয়েদের সিংহভাগই তৃণমূলে চলে গিয়েছে। এ সব খবর বিলক্ষণ রাখেন বিদায়ী বিদায়ক সুখবিলাসবাবু। তাই দীর্ঘ প্রচারের পরে অবসর পেলেও কাজ খোঁজেন তিনি। কাজে না থাকলেই সংখ্যারা পেয়ে বসছে যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy