E-Paper

আবাস-তালিকায় নাম নেই প্রাক্তন প্রধানেরই

পুরাতন মালদহের ভাবুক পঞ্চায়েতের রাঙামাটিয়ায় অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে ঝুপড়িতে বসবাস দীপালির। স্বামী বীরেন মণ্ডল ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। একমাত্র ছেলেও স্ত্রীকে নিয়ে পৃথক থাকেন।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:০৩

— প্রতীকী চিত্র।

পিচ রাস্তা তৈরির কাজে ব্যস্ত চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা। হাতে কাঁটা-ব্রাশ (ঢালাই মেঝে ঘষার কাজে ব্যবহৃত)। তিনি পুরাতন মালদহের ভাবুক পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান দীপালি মণ্ডল। দীপালি ২০১৬-২০১৮ পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন।

রাজ্যের শাসক দলের প্রাক্তন প্রধান হয়েও নির্মাণ শ্রমিকের কাজে কেন— প্রশ্ন শুনে দীপালি সুর চড়িয়ে বলেন, “প্রথমে পঞ্চায়েত সদস্য, পরে প্রধান হয়েছি ঠিকই। তবে প্রধান হওয়ার আগে আমি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেছি। প্রধান পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে ফের পেট চালানোর জন্য কখনও নির্মাণ শ্রমিক, কখনও ইটভাটা কিংবা মাঠে দিনমজুরি করি। মাথা উঁচু করে কাজ করছি।” দিপালীর কাজের প্রশংসা করেছেন বিরোধী পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে শাসকদলের নেতা-নেত্রীরাও।

পুরাতন মালদহের ভাবুক পঞ্চায়েতের রাঙামাটিয়ায় অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে ঝুপড়িতে বসবাস দীপালির। স্বামী বীরেন মণ্ডল ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। একমাত্র ছেলেও স্ত্রীকে নিয়ে পৃথক থাকেন। ফলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়েই সংসার তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান দীপালির। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন তিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। পরে, বিরোধীদের ভাঙিয়ে ২০১৬ সালে পঞ্চায়েতের দখল নেয় তৃণমূল। প্রধান হন দীপালি। ২০১৮ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে দল প্রার্থী করেনি দীপালিকে। স্থানীয়দের দাবি, প্রধান হওয়ার আগে তিনি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রধান হয়েও সাদামাটা থাকতেন তিনি। আবাস যোজনার তালিকায় নিজের বাবার নামটুকুও দেননি। গ্রামবাসী নিবারণ মণ্ডল বলেন, “দীপালির আমলেই আবাস যোজনার ঘর পেয়েছি। দীপালি গ্রামের উন্নয়নে প্রচুর রাস্তা, ড্রেন করেছে। কখনও দুর্নীতিতে জড়ায়নি।”

এ বার আবাস-তালিকায় বাবার নাম দিয়েছেন দীপালি। তবে তাতে নাম নেই। কেন? দীপালি বলেন, “এটা পঞ্চায়েত বলতে পারবে। তবে আমি বলতে পারি, পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে নিজের সম্পত্তি বাড়াইনি। যতটুকু পেরেছি মানুষের কাজ করেছি। দল টিকিট না দিলেও দুঃখ হয়নি। এখন আর রাজনীতি করি না। কী ভাবে পেট চলবে, তা নিয়ে ভেবেই দিন শেষ।”

তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ভোটে জিতে প্রধান হয়ে অনেকেই পেল্লাই বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। ব্যতিক্রমী দীপালি। ভাবুকের বিজেপির প্রধান প্রভুনাথ দুবে বলেন, “দীপালি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তিনি আগের মতো এখনও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর বাবার আবাসের তালিকা থেকে কেন নাম বাদ গিয়েছে, তা দেখা হচ্ছে। কারণ তাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য।” তৃণমূলের অঞ্চলের চেয়ারম্যান মানিক সরকার বলেন, “দীপালি ভাল ভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করলেও পরে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। দলের কর্মসূচিতে যান না। তাঁর টিকিট না-পাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানা নেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Awas Yojana TMC Gram Panchayat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy