জাতীয় সড়কের দুই প্রান্তে রয়েছে দুই দুষ্কৃতী দল। প্রকাশ্য দিবালোকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা নিয়ে সংঘর্ষ। যার জেরে কখনও নিহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। আবার কখনও খুন হচ্ছে অপরাধীরাও। ফলে কালিয়াচকের সুজাপুর থেকে নওদা যদুপুর পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে যাতায়াত এমনই আতঙ্কের হয়ে উঠেছে পরিবহণ কর্মী থেকে শুরু করে যাত্রীদের কাছে। আতঙ্কে অনেকে ঘুর পথে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
ইংরেজবাজার শহরের বাসিন্দা তথা বৈষ্ণবনগরের এক হাইস্কুলের শিক্ষক বলেন, দিনের বেলাতে সুজাপুর, নওদা যদুপুরে গুলি, বোমা চলে। রাস্তার উপরেই লড়াই চলে দুষ্কৃতীদের। তিনি বলেন, ‘‘প্রাণভয়ে সিঁটিয়ে গাড়িতেই বসে থাকতে হয়। তাই কালিয়াচকের ওই এলাকাগুলিকে এড়াতে ঘুর পথেই যাচ্ছি স্কুলে।’’ কালিয়াচকে পুলিশের শাসন চলে না বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। এক বাস চালক বলেন, ‘‘সিনেমায় দেখা যায় রাস্তার উপরেই দুষ্কৃতীরা বোমা, গুলি নিয়ে লড়াই করছে। কালিয়াচক রুটে গাড়ি চালানোর পর সেই দৃশ্যে বাস্তবেও দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় সড়কের উপরে গাড়ি থামিয়ে লড়াই করছে দুষ্কৃতীরা।’’
গত, শনিবার বিকেলে সুজাপুরের হাসপাতাল মোড়ের কাছে জমি দখলকে কেন্দ্র করে এলাকার দুই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে গুলির লড়াই চলছিল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। সেই লড়াই এর মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ইনজুল শেখ নামে নিরীহ এক গ্রামীণ চিকিৎসকের। এই ঘটনায় এখনও থমথমে রয়েছে এলাকা। এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে রয়েছে, আবারও গুলি চলবে না তো।
সুজাপুরের মতো গত সেপ্টেম্বর মাসে এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল একই থানা এলাকার নওদা যদুপুরে। দুই দুষ্কৃতী বকুল ও জাকির শেখের দলের গুলির লড়াই এর মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল নিরীহ এক ট্রাক মালিকের। এমনকী, দুষ্কৃতীদের লড়াই গুলিবিদ্ধ হয়েছে স্কুল ছাত্রও।
গত সাত মাসে শুধু মাত্র কালিয়াচকের সুজাপুর এবং নওদা যদুপুরে দশটির বেশি খুন হয়েছে। আর অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। জাতীয় সড়কের উপরেই কেন সংঘর্ষে হচ্ছে দুষ্কৃতীদের তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ককে সীমানা হিসেবে ব্যবহার করছে দুষ্কৃতীরা। নওদা যদুপুরের রাস্তার একপাশে রয়েছে জাকির শেখ ও তাঁর দলবল। তেমনই অপর প্রান্তে রয়েছে বকুল শেখ।
নওদা যদুপুরের মতো সুজাপুরেও রয়েছে একই অবস্থা। দুষ্কৃতী দলেরা একে অপরের উপরে হামলা চালানোর সময় অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে জাতীয় সড়ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি থামিয়ে চলছে লড়াই। এর জেরে প্রায় যানজট লেগে থাকে। আবার অনেক সময় ক্ষোভে গ্রামবাসীরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। ফলে কালিয়াচকের সুজাপুর থেকে নওদা যদুপুরের এই ছয় কিলোমিটার পথ আতঙ্কের হয়ে উঠেছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে। ভয়ে অধিকাংশ মানুষই বেছে নিচ্ছেন ঘুর পথই। ইংরেজবাজার থেকে মোথাবাড়ি হয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কালিয়াচকে যাচ্ছেন তাঁরা। বাস মালিক মনোরঞ্জন সিকদার বলেন, কালিয়াচকে জাতীয় সড়কের উপর খুন নিত্যদিনের হয়ে উঠেছে। চালকেরা ওই রুটে গাড়ি চালাতে ভয় পাচ্ছেন।
পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতীরা জাতীয় সড়কেই বোমা, গুলি নিয়ে লড়াই করে। তবুও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী সমিতিও। মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, খুন পাল্টা খুনের ফলে কালিয়াচক যাত্রা আমাদের কাছে আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। রাস্তায় কোন পুলিশি টহলদারি নেই। পুলিশের নিষ্কৃয়তার জন্য দুষ্কৃতীদের কাছে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে সুজাপুর, নওদা যদুপুর। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘কালিয়াচকের ওই এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। এলাকায় মোতায়ন রয়েছে পুলিশ পিকেট। দুষ্কৃতীদের খোঁজে অভিযান চালানো হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত মাসে সুজাপুরে জাতীয় সড়কে খুন হয়েছে চারটি। গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই জন। আর নওদা যদপুরে খুন হয়েছে পাঁচটি। আর গুলিবিদ্ধ হয়েছে ছয়জন। একাধিকবার জাতীয় সড়কে ওই দু’এলাকায় সংঘর্ষ হয়ে দুষ্কৃতীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy