Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Flood Like situation

জলবন্দি দশ হাজার

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টি হয়। যার জেরে, ডুয়ার্সের পাহাড়ি নদীগুলো ফুঁসতে শুরু করে।

নদীগর্ভে মেচপাড়ার শ্রমিক মহল্লা।

নদীগর্ভে মেচপাড়ার শ্রমিক মহল্লা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:১৮
Share: Save:

টানা বৃষ্টিতে আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হল। মৃত্যু হল দু’জনের। নিখোঁজ এক জন। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় দশ হাজার মানুষ। কালচিনির মেচপাড়ায় জলবন্দি মানুষকে উদ্ধারে নামে বায়ুসেনা। জয়গাঁয় বিবাড়ি এলাকায় গোবরজ্যোতি নদীর জলে ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের প্রায় পঞ্চাশ মিটার অংশ ভেসে গিয়ে ভারত ও ভুটানের মধ্যে যাত্রিবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারে কালজানি ও হাসিমারা এবং কোচবিহারেতোর্সা এবং মেখলিগঞ্জে তিস্তা নদীতে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়। জলপাইগুড়ির কিছু এলাকায় জলঢাকা ও তিস্তা নদীর জল বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। জলমগ্ন হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকা।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টি হয়। যার জেরে, ডুয়ার্সের পাহাড়ি নদীগুলো ফুঁসতে শুরু করে। সকালের দিকে কালচিনির মেচপাড়া এলাকায় পানা নদীর জল ঢুকে আটকে পড়েন প্রায় ৭২ জন বাসিন্দা। তাঁদের উদ্ধারেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও এনডিআরএফের পাশাপাশি, নামানো হয় বায়ুসেনার জওয়ানদের। তৈরি রাখা হয় হেলিকপ্টারও। পরে, প্রশাসনের তরফে তাঁদের প্রত্যেককে উদ্ধারের কথা জানানো হয়। তার আগে, বিপর্যয় মোকাবিলা দলের এক কর্মী জলে ভেসে গেলে, জলে বাঁশ ফেলে কোনও মতে তাঁকে টেনে উদ্ধার করেন কালচিনির বিজেপি বিধায়ক বিশাল লামা। অন্য দিকে, আর এক জনকে হাত দিয়ে টেনে উদ্ধার করেন তৃণমূলের কালচিনি ব্লক সভাপতি বীরেন্দ্র বারা ওঁরাও। এরই মধ্যে জয়গাঁর ঝর্ণা বস্তিতে তোর্সা নদীর জলে তলিয়ে যান সহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি।

মাদারিহাটের হান্টাপাড়া সংলগ্ন বাঙরি নদীতে হড়পা বানে রুহিনাথ ওরাওঁ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি ভেসে যান। পরে কয়েক কিলোমিটার দূরে মুজনাই চা বাগানে মুজনাই নদীর ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বাঙরি নদীর জলে ভেসে যায় একটা গোটা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও। মাদারিহাটের সঙ্গে টোটোপাড়া ও হান্টাপাড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাদারিহাট টুরিস্ট লজও জলমগ্ন হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের ছোটপুকুরিয়া অর্জুনপাড়ায় রাস্তা পার হতে গিয়ে বামনি নদীতে তলিয়ে লালো নাগাসিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। পরে, তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। এ ছাড়া ওই ব্লকের শোভাগঞ্জ, দ্বীপচর জলমগ্ন হয়।

কুমারগ্রামের ছোট দলদলিতে গ্রামের একটি রাস্তা রায়ডাক-২ নদীতে তলিয়ে যায়। একাধিক ছোট নদীর ডাইভারসনের উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় আলিপুরদুয়ার ও ফালাকাটার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘুরপথে কোচবিহার হয়ে যানবাহন চলে। ফালাকাটা শহরের বেশ কিছু এলাকাও জলমগ্ন হয়। বিরকিটি নদীর জল ভরে যায় ফালাকাটার জটেশ্বরের লীলাবতী কলেজ। সেখানে আবার রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। অভিযোগ, সেখানে কিচেন শেড জলে ডুবে যায়।

জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি, গয়েরকাটার বিভিন্ন এলাকা। গয়েরকাটায় অনেকেই জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোথাও দড়ির সাহায্যে, কোথাও পিঠে চাপিয়ে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হাতিনালার জল উপচে ঢুকে পড়েছে বিন্নাগুড়ি এসএম কলোনি, নেতাজিপল্লি, সুভাষপল্লি এলাকায়। চা বাগানের উপর দিয়ে বইছে জলের স্রোত। তিস্তা নদীর জল ঢুকে চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েতের বাসুসুবা, মাস্টারপাড়া, বাবুপাড়া ও কেরানিপারার বহু বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ক্রান্তির বিডিও প্রবীরকুমার সিংহ জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে জলবন্দি ২০০ পরিবারের হাতে শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও পানীয় জল তুলে দেন।

জলে প্লাবিত হয় কোচবিহারের তোর্সা নদী লাগোয়া অসংরক্ষিত এলাকা। কোচবিহার শহর সংলগ্ন বাঁধের পাশের কিছু বসতি গড়ে ওঠে। ঘুঘুমারিতেও নদী ঘেঁষে গড়ে ওঠা বসতি এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। মহকুমাশাসক (কোচবিহার সদর) রাকিবুর রহমান বলেন, ‘‘সব দিকে নজর রয়েছে।’’ তুফানগঞ্জের বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাউকুঠি এলাকায় কালজানির জলে অসম সংলগ্ন এলাকায় পার বাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় অসম সংলগ্ন ঝাউকুঠির একটি অংশ। মেখলিগঞ্জে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে চাষের জমি, বাঁশ ঝাড়, সৌরসেচ প্রকল্প, শৌচাগার ও বিদ্যুতের খুঁটি। যে কোন সময় নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে সাবেক ছিটমহলে চলাচলের একমাত্র রাস্তা ও বসতবাড়ি। সে আতঙ্কে প্রহর গুনছেন মেখলিগঞ্জ ব্লকের বাগডোগরা ফুলকাডাবড়ি পঞ্চায়েতের ৯২ ফুলকাডাবড়ির মঙলিবাড়ির বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Like situation Alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE