Advertisement
E-Paper

নথি নেই, বনবস্তির কপালে ভাঁজ দুশ্চিন্তার

তাঁরা জানান, বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে তারা বনবস্তিতে রয়েছেন। তবে সরকার জমির পাট্টা না দেওয়ায় কারও কাছেই জমির নথি নেই। জন্মের শংসাপত্রও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে বা রাজ্যের কোনও বোর্ডের শংসাপত্রও নেই। তাঁদের অনেকেই বলছেন, এই বনবস্তির খুব কমই আগে স্কুলে যেত। তাতেই এই সমস্যা। 

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৪২
চিন্তিত: ফুলমায়া তামাং। পুনডিং বনবস্তিতে। ছবি: স্বরূপ সরকার

চিন্তিত: ফুলমায়া তামাং। পুনডিং বনবস্তিতে। ছবি: স্বরূপ সরকার

নব্বয়োর্ধ্ব জিতবাহাদুর তামাং কাঠের বাড়ির প্ল্যাঙ্কিংয়ের বারান্দা বসে ঝাড়ু বাঁধছিলেন। তাঁর চার ছেলেমেয়ে। এখন সকলেরই পরিবার রয়েছে। জিতবাহাদুরের কথায়, এই বয়সে কাজকর্ম নেই। ঘরে বসে থাকেন। খাওয়াদাওয়া করেন। তবে তাঁর পরিবার চিন্তায় পড়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে। একই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বালকৃষ্ণ ছেত্রী, গীতা ছেত্রীরা। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে সুকনা গ্রাম পঞ্চায়েতে মহানন্দা অভয়ারণ্যে খইরানি ও পুনডিং বনবস্তির বাসিন্দাদের তাই দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েও তারা বিভ্রান্ত। বালকৃষ্ণের কথায়, সেখানে আলাদা করে গোর্খাদের কথা বলা নেই। তাই ‘কী হয়-কী হয়’— ওই দুশ্চিন্তা থাকছেই বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা জানান, বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে তারা বনবস্তিতে রয়েছেন। তবে সরকার জমির পাট্টা না দেওয়ায় কারও কাছেই জমির নথি নেই। জন্মের শংসাপত্রও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে বা রাজ্যের কোনও বোর্ডের শংসাপত্রও নেই। তাঁদের অনেকেই বলছেন, এই বনবস্তির খুব কমই আগে স্কুলে যেত। তাতেই এই সমস্যা।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুকনা গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪টি বনবস্তি রয়েছে। সব মিলে ৩০০-এর মতো পরিবার বসবাস করে। দার্জিলিং জেলায় ১৭৬টির মতো বনবস্তি রয়েছে।

খইরানি বস্তির বাসিন্দা বৃদ্ধ পদম বাহাদুর প্রধানের কথায়, ‘‘আগে স্কুলে যাওয়ার এত চল ছিল না। বন দফতর থেকে ১ হেক্টর করে সকলকে জমি দেওয়া হয়েছে। তাতেই চাষ-আবাদ বা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পালন করে জীবন চলে যেত। এখন তাই ভোটার পরিচয়পত্রই সম্বল অনেকের।’’ পুনডিং বনবস্তির জিতবাহাদুরের মেয়ে কবিতা তামাংয়ের দাবি, ‘‘আগে এলাকায় স্কুল ছিল না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল না। তাই এত পুরনো নথি অধিকাংশের কাছে নেই। ২০০৬ সালে বনবস্তির বাসিন্দাদের জমির অধিকার আইন হয়েছে। অথচ তা কার্যকর করা হয়নি। তাই এনআরসি লাগু হলে বিপাকে পড়তে হতে পারে বনবস্তির বাসিন্দাদের সকলকেই।’’

খইরানি বনবস্তির বাসিন্দা ৮৬ বছরের বলবাহাদুর থাপাও এনআরসি, সিএবি নিয়ে চিন্তিত। তিনি জানান, মহানন্দা অভয়ারণ্যের আরও ভিতরে ওই বস্তি ছিল। ১৯৩১ সাল নাগাদ জঙ্গলের কাছে বর্তমান জায়গায় বনবস্তিবাসীদের সরিয়ে আনা হয়। সরকারের তরফে বসানো হলেও নথি দেওয়া হয়নি। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এত দিন এ সব নিয়ে ভাবিনি। এখন ১৯৭১ সালের আগের পরিবারের জমি বা কোনও নথি না দেখাতে পারলে শিবিরে থাকতে হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তা নিয়ে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। কেন না সংশোধনী বিলে তো শুনছি সব কিছু স্পষ্ট নয়।’’ এই চিন্তা এখন বনবস্তির ঘরে ঘরে।

Siliguri Tribes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy