অধিকার: শিলিগুড়িতে মহানন্দায় তর্পণে এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র।
করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছে না কোনও অ্যাম্বুল্যান্স। কেউ হয়তো হাঁকছে ১০-১২ হাজার টাকা। তখন এগিয়ে এসেছেন তাঁদের কেউ কেউ। নিজের টোটোয় চাপিয়ে নিখরচায় পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে।
করোনায় মৃতদের দেহ যখন দাহ করতে ভয় পেয়েছেন অন্যরা, তখন এই মেয়েরাই দল বেঁধে হাজির। প্রথা ভেঙে দেহ নিয়ে গিয়েছেন শ্মশান।
এ বারে এই মেয়েরা দল বেঁধে মহানন্দায় নেমে তর্পণও করলেন মহালয়ার ভোরে। তাঁদের মন্ত্র পড়ালেন দলেরই আর এক মেয়ে।
একে কি বলবেন প্রথা ভাঙা? না। দোলা রায়, মুনমুন সরকাররা একে বলছেন প্রথা বদল। তাঁদের কথায়, বাবা-মায়ের তর্পণ করার অধিকার শুধু ছেলের থাকবে কেন? এই অধিকার তো মেয়েরও আছে।
টোটো চালান মুনমুন। তাঁর সঙ্গে দোলা ছাড়াও রয়েছেন সঙ্গীতা ভট্টাচার্য, সুপর্ণা পোদ্দার, রেখা স্বামীরা। করোনার সময় মুনমুন নিজের টোটোতে করে রোগীদের নিয়ে গিয়েছেন। করোনায় মৃত একাধিক রোগীকে ওই টোটোতে করেই শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে গিয়েছেন। যখন দেহ নিয়ে যাওয়ার লোক মেলেনি, সকলে জুটে একসঙ্গে এগিয়ে এসেছেন সেই কাজে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যানিটাইজ়েশন বা রক্তদান শিবির, এ সব তো আছেই।
এই মেয়েরাই বুধবার সদ্য অন্ধকার ভাঙা ভোরে হাজির মহানন্দা নদীর ধারে। হাতে কোশাকুশি। মুখে মন্ত্র। সেই মন্ত্র পড়াচ্ছেন তাঁদের দলেরই সঙ্গীতা। তিনিই তর্পণের পুরোহিত। শুধু পিতৃপুরুষ নয়, মায়েদের জন্যও এ দিন নদীর জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ করলেন ওঁরা।
মুনমুন বলেন, ‘‘নারী-পুরুষ সমান অধিকারের কথা মুখে বলা হয়। কিন্তু অধিকার কি কেউ কাউকে দেয়? আমরা বাবা-মায়ের প্রতি নিজেদের অধিকারে তর্পণ করলাম।’’ বাকি সকলেও খুশি। বলেন, ‘‘প্রথা ভাঙা নয়, এটাকে আমরা প্রথা বদলই বলব।’’ তাঁদের তর্পণ করিয়ে নিজের পুরোহিত জীবন শুরু করলেন সঙ্গীতা। জানালেন, এ বারে তিনি দুর্গাপুজোও করবেন।
মুনমুনদের তর্পণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিলিগুড়ির অনেক শাস্ত্রজ্ঞ। তাঁদের মতে, মেয়েরা তর্পণ করতে পারবে না— এমন কথা কোথাও বলা নেই। এখন অনেক ক্ষেত্রে শুধু তর্পণই নয়, বাবা-মায়ের মুখাগ্নিও করছে মেয়েরা। আর মুনমুনরা তো এর মধ্যেই অনেক প্রথা বদলে দিয়েছেন।
দেবীপক্ষের শুরুতে তাই এ ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন শিলিগুড়ির পঞ্চকন্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy