একাকী: কিং সাহেবের ঘাটে যাওয়ার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
শহর গড়ার পরে সার্ধশতবর্ষ কেটে গিয়েছে। কখনও বড়লাটের নামে কখনও নবাবদের নামে রাস্তার নামকরণ হয়েছে। বদলে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের সরকারি ভবন, দর্শনীয় স্থানের নামও। শুধু ইতিহাসের একটুকরো থমকে রয়েছে করলা নদীর পাশে বুড়ো শিরিস গাছের ছায়ার নীচে। এই ঘাটটির নাম দেড়শো বছরেও বদলায়নি।
সরকারি খাতায় এখনও জেলা পুলিশ সুপারের দফতরের পাশের করলা নদীর ঘাটের নাম কিং সাহেবের ঘাট। স্বাধীনতার পরে বেশ কয়েকবার এবং সাম্প্রতিক কালে পুরসভার ১২৫ বছর উদযাপনের সময় শহরের রাস্তাগুলির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। সে সময়ে কিংসাহেবের ঘাটেরও নাম বদলের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু প্রস্তাব আর চূড়ান্ত রূপরেখা পায়নি।
ঔপনিবেষিক ছোঁয়া এড়ানোর যুক্তি দিয়ে কলকাতাতে ক্যানিং স্ট্রিট সহ নানা রাস্তার নাম বদলেছে। জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তার একদা নাম ছিল কার্ট রোড। সে নাম স্বাধীনতার পর বদলে যায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রোডে। তাহলে কিং সাহেবের ঘাট ব্যতিক্রম কেন?
জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, এই শহরের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। ছোট বেলায় বড়দের কাছে শুনেছি একসময়ে ওই ঘাটে কিং সাহাবের বজরা আসত। এলাকায় বসতি গড়ে তোলার পেছনেও সেই সাহাবের অবদান রয়েছে। ভাল স্মৃতিতে বহন করাই যায়।
জলপাইগুড়ি জেলার পুরোনো নথি থেকে জানা যায় কিং সাহেবের পাটের গোলা ছিল। সে কারণেই তিস্তার পাড়ে একটি ঘাটের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে মুখে মুখে কিং সাহেবের ঘাট নামে প্রচলিত। সরকারি নথিতে উল্লেখ্য রয়েছে ‘মিস্টার কিং’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাঁধ দেওয়া হয় নদীতে। তিস্তা এবং করলা আলাদা হয়ে যায় বাঁধের দেওয়ালে। করলা নদীর দিকে পড়েছে ঘাটটি। তবে ঘাটের নাম বদলায়নি।
শহরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা উমেশ শর্মার কথায়, ‘‘এক একটি নামের পেছনে সে সময়কার প্রেক্ষিত থাকে। স্বাধীনতার পরে সাহেবদের রাখা নাম মুছে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছিল দেশজুড়েই। সে সময়ে শহরের বিপ্লবীরাও কিং সাহাবের নাম নিয়ে আপত্তি তোলেননি। তার কারণ হয়ত এই নাম সাহেবদের রাখা নয়, লোকমুখে এক সাহেবের নামে ভালবাসা থেকে তৈরি।’’
তথ্যে জানা যায় কিং সাহেব বিয়ে করেছিলেন এ দেশের এক মহিলাকে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিত্তশালী সাহেব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। নিজের ইজারা নেওয়া ঘাটে প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যে পর্যন্ত বসে থাকতেন। সে সময় পলিতে তিস্তা-করলার গতি আটকে যায়নি। কিছু সময় পরপর এক একটি ঢেউ আসত। সেই ঢেউকে লক্ষ্য করে হাতে ধরা দোনলা বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়তেন। আমৃত্যু ঢেউ-য়ে গুলি ছুঁড়ে গিয়েছেন কিংসাহেব। মজে যাওয়া করলার পাশে পাথর-কংক্রিটের বাঁধানো ঘাটে এখনও বয়ে চলেছে সে স্মৃতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy