Advertisement
E-Paper

Taliban: ‘বোন কি পারবে আফগানদের সংস্কৃতি রপ্ত করতে’

সূত্রের খবর, পাহাড়ের দুই জেলা থেকে যাঁরা আফগানিস্তানে গিয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী।

সব্যসাচী ঘোষ ও কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৩
উৎকণ্ঠা: মেয়ে আফগানিস্তানে। মালবাজারের বাড়িতে ছেয়ে আছে উদ্বেগ।

উৎকণ্ঠা: মেয়ে আফগানিস্তানে। মালবাজারের বাড়িতে ছেয়ে আছে উদ্বেগ। নিজস্ব চিত্র।

মালবাজার ও শিলিগুড়ি: আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখল করলে উদ্বেগ বাড়ে পাহাড় ও ডুয়ার্সের।

সাড়ে তিন দশক মালবাজারেই রয়েছেন নজর খান। মেয়ে মরিয়মের বিয়ে দিয়েছেন ১৫ বছর হয়ে গেল। জাতে আফগান হলে কী হবে, ঝরঝরে বাংলা বলেন মরিয়ম। জামাই তাহির খান কাজের জন্য আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন এ দেশে। মাসদুয়েক আগে স্ত্রী মরিয়মকে নিয়ে আফগানিস্তানে পাড়ি দেন তাহির। সে দেশে কী করছে তাঁদের ঘরের মেয়ে, কাবুলিওয়ালার ‘বাঙালি’ বউ, এই নিয়ে ভেবে অস্থির মরিয়মের পরিবার।

কাবুল থেকে তাহিরদের বাড়ি তিন ঘণ্টার পথ। ফারহানা প্রদেশের একটি বর্ধিষ্ণু গ্রামের ছেলে তিনি। মরিয়মের বাড়ির লোকজনের কথায়, জামাইয়ের সঙ্গে তো সুখেই ছিল মেয়ে। এখন অশান্ত আফগানিস্তানের সে কী করছে, সেটাই চিন্তার। মালবাজার শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সার্কাসের মাঠ সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের বাড়িতে বসে মেয়ের জন্যে ‘দোয়া’ করছেন ওঁরা। দু’দিন আগে তালিবান কাবুল দখল করতেই ভারতে চলে আসার জন্যে মেয়ে-জামাইকে ফোনও করেছিলেন নজর। কিন্তু তাহের জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও সমস্যা নেই।

যদিও জামাইয়ের এই আশ্বাসে খুব নিশ্চিন্ত নয় খান পরিবার। ইমরান বললেন, “রক্তে আমরা আফগান হলেও বাংলার জল-হাওয়ায় তো আমি আর বোন আদ্যন্ত বাঙালি হয়ে গিয়েছি। ও-দেশের বদলে যাওয়া সংস্কৃতি কি বোন আদৌ রপ্ত করতে পারবে?’’ তালিবান আমলে যে মেয়েদের অবস্থা ভাল হয় না, তা-ও অতীত থেকে স্পষ্ট। মরিয়মের মা নুরজাহান চান মেয়েকে ছুঁয়ে দেখতে। প্রশ্ন করছেন, “মেয়েটা কি ওখানে মানিয়ে নিয়ে থাকতে পারবে?” শহর তৃণমূলের সভাপতি অমিত দে জানান, মালবাজারের সকলেই এদের পাশে রয়েছে। দেখাও করেছেন তাঁদের সঙ্গে।

কার্শিয়াংয়ের সঞ্জু গুরুংও যেমন। মন্টিভিট চা বাগানে থাকেন তিনি। আর স্বামী শেখর গুরুং কাজ করেন সুদূর কাবুলে। গত কয়েক দিন ধরে শেখরের চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারেননি সঞ্জু। মঙ্গলবার সকালে স্বামীর সঙ্গে এক দফায় সামান্য কথা হলেও সারাদিনে আর ফোনে পাননি তাঁকে। সন্ধ্যা থেকে যতবার ফোন বেজেছে, ছুটে গিয়েছেন সঞ্জু। উৎকণ্ঠায় খেতে পারছেন না। টিভিতে, মোবাইলে ছবি, ভিডিয়ো দেখে ভয়ে, আতঙ্কে কথা বলার শক্তিটাও যেন কম ছে। শেখরের ভাই সুরজ বলেন, ‘‘দাদা কাবুলে কোরিয়ান দূতাবাসে নিরাপত্তাকর্মী। প্রশাসন এখনও যোগাযোগ করেনি। কী করব জানি না।’’

মন্টিভিটের বাসিন্দা সুনীল সুব্বাও। চার বছর ধরে তিনি কাবুলের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাকর্মী। চার মাস আগে কার্শিয়াং ঘুরে গিয়েছেন। স্ত্রী সুধা সুব্বা দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে। বড় ছেলে সুবেক কলেজ পড়ুয়া। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের প্রতিটা ঘণ্টা এক একটা বছরের সমান। মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ভয়ে আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। তবে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকার, প্রশাসনের কাজে আর্জি বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে দিন।’’

কাবুলে ঠিক কতজন আছেন, এখনও জেলা প্রশাসনগুলির কাছে স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, পাহাড়ের দুই জেলা থেকে যাঁরা আফগানিস্তানে গিয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। তালিবান দেশের দখল নিতেই এঁদের বেশিরভাগ কাবুলের কোয়াসবা টিপিজি ক্যাম্প (পিডি-১৫) আশ্রয় নেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন ব্লকে খোঁজ শুরু করেছি। কিছু নাম মিলেছে। বিকেল অবধি কোনও পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy