বহাল তবিয়তে: সংরক্ষিত কামরায় এ ভাবেই চলেছেন তৃণমূল কর্মীরা। সকলেরই বুকে আঁটা দলের ব্যাজ। ছবি: নারায়ণ দে
ধোপদুরস্ত পোশাক আশাকে বছর পঁচিশের যুবক৷ হাতে ব্যাগ৷ বুকে জামার মধ্যে পিন দিয়ে গাঁথা একটা ব্যাজ৷ যাতে লেখা ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে ২১ জুলাই শহিদ স্মরণে ধর্মতলা চলো৷ প্রধান বক্তা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷’
নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে পদাতিক একপ্রেস ছাড়ার ঠিক প্রাক মুহূর্তে স্টেশনে এসেছিলেন ওই যুবক৷ সাধারণ কামরা ভিড়ে ঠাসা দেখে সটান উঠে পড়েন সংরক্ষিত কামরায়। তার পরে বসে পড়েন ফাঁকা দেখে একটি আসনে। টিকিট রয়েছে কি না, পাশের এক যাত্রী জানতে চাইতেই যুবক নিজের বুকে থাকা ব্যাজের দিকে ইশারা করে হাসতে হাসতে বললেন, “দেখছেন না? এটাই তো টিকিট!”
শুধু এই যুবকই নন৷ বুধবার বিকালে নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস ছাড়ার মুহূর্তে দেখা গেল এমন অনেক পুরুষ-মহিলাই জামায় অথবা শাড়িতে ব্যাজ লাগিয়ে সংরক্ষিত কামরার আসনে বসে রয়েছেন৷ টিকিট রয়েছে কি না জিজ্ঞেস করলে প্রত্যেকের জবাবই অনেকটা সেই যুবকের মতো৷
২১ জুলাই কলকাতায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সভাকে ঘিরে এমন ঘটনা যে এই প্রথম, তা অবশ্য নয়৷ প্রতি বছরই ওই সভায় যোগ দিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের প্রচুর তৃণমূল কর্মী-সমর্থক কলকাতায় যান৷ আর প্রতি বছরই অভিযোগ ওঠে, সভায় যোগ দিতে যাওয়া শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন স্টেশনে গায়ের জোরে ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়েছেন৷
এ বছর অবশ্য আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল— অন্যবার কী হয়েছে জানা নেই, অন্তত এ বার দলের কর্মী-সমর্থকরা টিকিট কেটে ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় উঠবেন৷ রেলের তরফেও জানান হয়েছিল, বৈধ টিকিট ছাড়া কেউ যাতে সংরক্ষিত কামরায় উঠতে না পারেন, তা কড়া ভাবে দেখা হবে৷ বস্তুত, পাশের জেলা জলপাইগুড়িতে সেটা দেখা হচ্ছে বলেও দাবি। তার পরও ২১ জুলাইয়ের তিন দিন আগে থেকেই এমন ঘটনা শুরু হল কেন? রেলের এক কর্তা বলেন, “এমন কোনও অভিযোগ পাইনি৷” আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মার দাবি, “দলের কর্মী-সমর্থকরা বৈধ টিকিট ছাড়া সংরক্ষিত কামরায় উঠেছেন— এমনটা আমার জানা নেই৷”
বুধবার থেকেই আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা হতে শুরু করেছেন৷ দুপুরে নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে ছাড়া তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস কিংবা বিকেলে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ছাড়া কাঞ্চকন্যা এক্সপ্রেসের সাধারণ যাত্রী কামরাগুলি তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ভিড়েই ঠাসা ছিল৷ যাদের একজন ভাটিবাড়ির লিটন সেনকে টিকিট কেটেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “নেতারা বলেছেন, বুকে ব্যাজ লাগালেই হয়ে যাবে৷” পাশ থেকে দলের আরেক কর্মী ফটিকচন্দ্র দাস বললেন, “আসলে এটা বড় কর্মসূচী তো৷ দলের নেতাদের সঙ্গে রেলের কথা হয়ে রয়েছে৷ ব্যাচ থাকলে টিকিটের প্রয়োজন নেই৷”
তারপরও অবশ্য তৃণমূলের জেলা নেতা মৃদুল গোস্বামী জানালেন, “এদিন দলের প্রত্যেক কর্মী-সমর্থকই ট্রেনের টিকিট কেটে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন৷”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy