Advertisement
E-Paper

ভয়েই আধমরা পরিবার

মায়ের অনুরোধ শুনে যুবকের দল অবশ্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কিছু পরে ওই যুবক বাড়িতে ফেরেন। আতঙ্কে তখনও তিনি কাঁপছেন। বলেন, ‘‘আমি অনুতপ্ত।’’ ওই যুবকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শহরের একদল বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০১
বিতণ্ডা: এক যুবকের বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি, জলপাইগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বিতণ্ডা: এক যুবকের বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি, জলপাইগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বারান্দার লোহার গ্রিলের এ পারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে একদল যুবক। গ্রিলের অন্যপ্রান্তে এক বৃদ্ধ দম্পতির এবং আর একজন মহিলা। যুবকেরা দাবি করছেন, ওই দম্পতির ছেলেকে সামনে আনতে হবে। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সেই ছেলে ফেসবুকে সেনা জওয়ানদের নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য লিখেছেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্তকে মারধর করা হবে না— এমন আশ্বাসও দিচ্ছেন যুবকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘শুধু সামনে এনে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলিয়ে ছেড়ে দেব।’’ গ্রিলের ফাঁক গলে বেরিয়ে আছে ‘অভিযুক্ত’ যুবকের ষাট ছুঁইছুঁই মায়ের কাঁপতে থাকা জোড় হাত। যুবকেরা মায়ের গলা দিয়ে আর্তনাদের মতো স্বর বার হচ্ছে, “বাবারা, আমি বলছি ‘ভারত মাতা কি জয়’। আমি মিছিলে হাঁটব চল। আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও, ও মানসিক ভাবে অসুস্থ।”

সোমবার দুপুরে জলপাইগুড়ির মোহান্তপাড়ার ঘটনা।

মায়ের অনুরোধ শুনে যুবকের দল অবশ্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কিছু পরে ওই যুবক বাড়িতে ফেরেন। আতঙ্কে তখনও তিনি কাঁপছেন। বলেন, ‘‘আমি অনুতপ্ত।’’ ওই যুবকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শহরের একদল বাসিন্দা। বিকেলে নিরাপত্তা চাইতে কোতোয়ালি থানায় যান ওই যুবকের পরিবারও। সোমবার মোহন্তপাড়া এবং আদরপাড়ায় দুই যুবকের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় একদল বাসিন্দা। দু’ক্ষেত্রেই অবশ্য যুবকদের সামনে পায়নি বিক্ষোভকারীরা। জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হয়েছে।’’

আদরপাড়ার বাসিন্দা আনন্দচন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ার বাড়িতে এ দিন বিকেলে একদল বাসিন্দা গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ছাত্রটিকে সামনে নিয়ে আসার দাবি জানাতে থাকেন সকলে। ছাত্রের মা বলেন, ‘‘তোমরা এ ভাবে কারও বাড়িতে চড়াও হচ্ছ কেন? এ দেশ তো আমাদেরও।’’ শুরু হয় বচসা। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে ছাত্রের মা-বাবা রেসকোর্স পাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ছাত্রকে না পেয়ে তাঁর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে হুমকি দিয়ে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারীরা চলে যেতে ছাত্রের বাবাকে ধরে রাস্তাতেই বসে কাঁদতে থাকেন মা। বলতে থাকেন, ‘‘ছেলেটার ভবিষ্যত তো শেষ হয়ে যাবে!’’ তাড়াহুড়োয় বাড়ির পোশাক পরেই এতটা পথ চলে আসা ছাত্রের বাবা তখন পথচলতিদের ডেকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, ‘‘অভিযোগ হলে ছেলেটা চাকরি পাবে তো?’’

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিজেপি, তৃণমূল, বাম— সকলেই ছিলেন। পলেন ঘোষ, অজয় সাহা, নব্যেন্দু মৌলিকরা বলেন, “হিংসা করতে যাইনি। ফেসবুকে যাঁরা দেশবিরোধী কথা লিখছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে যাই, কেন এমন লিখছেন। হুমকি দেওয়া হয়নি। অভিভাবকেরা মিথ্যে ভয় পেয়েছেন।’’

facebook post Jalpaiguri জলপাইগুড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy