Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সব কাজে টাকা চাই, ক্ষোভ গ্রামে

দলে নরম স্বভাবের এবং ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবেই পরিচিত জগদীশ। মুখে হাসি লেগেই থাকে। মিষ্টভাষীও। সিতাইয়ে তিনি তৃণমূলের শেষ কথা ছিলেন, এটা একবাক্যে মানছেন ডান-বাম সবাই। গত পাঁচ বছরে তিনি সিতাইয়েরও শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন— এমনটা শোনা যায় কান পাতলেই।

সিতাইয়ে বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সিতাইয়ে বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ 
সিতাই শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

বাজারের পাশ দিয়ে সরু কংক্রিটের রাস্তা ধরে একশো মিটার এগিয়েই তিন তলা বাড়ি। সামনে একটি টিনের ছাউনির নীচে বসে রয়েছেন কয়েক জন পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার। বাড়ির সদর দরজায় তালা ঝোলানো। বাইরে থেকে ঢিল ছুড়ে বাড়ির কাচের জানালা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তার চিহ্ন স্পষ্ট। এটা সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার বাড়ি। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই গ্রাম ছাড়া তিনি। তাঁর বাড়িতে হামলে পড়েছিলেন একদল মানুষ। ‘বিধায়ক কি বাড়ি ফিরবেন?’ বসে থাকা পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞেস করতেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন তাঁরা। বললেন, “আমাদের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কিছু জানি না।”

দলে নরম স্বভাবের এবং ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবেই পরিচিত জগদীশ। মুখে হাসি লেগেই থাকে। মিষ্টভাষীও। সিতাইয়ে তিনি তৃণমূলের শেষ কথা ছিলেন, এটা একবাক্যে মানছেন ডান-বাম সবাই। গত পাঁচ বছরে তিনি সিতাইয়েরও শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন— এমনটা শোনা যায় কান পাতলেই। তখন দুপুর। বিধায়কের বাড়ি থেকে খানিক দূরে ছোট্ট জটলা। তাঁদেরই একজন বলেন, “একশো দিনের কাজে ওঁর টাকা চাই। রাস্তা তৈরিতে ওঁর টাকা চাই। সরকারি যে কোনও কাজে আগে তাঁর হাতে টাকা পৌঁছে দিত হত।” আর এক জন বলেন, “একটি বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। গ্রামের মানুষ যার নাম দিয়েছে লুটেরা বাহিনী। সেই বাহিনীর মাথা ছিলেন উনি।”

জগদীশ অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব মিথ্যে অভিযোগ। বিজেপি রটাচ্ছে।’’ সিতাই বাজারের কাছেই বাসস্ট্যান্ড। সেখানেই তৃণমূলের ব্লক পার্টি অফিস। বিধায়ক ওই অফিসেই নিয়মিত বসতেন। সেই পার্টি অফিসের দরজা-জানালা, ভিতরে আসবাবপত্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেউ এখন ওই ঘরমুখো হন না।

ভোটের ফল প্রকাশের পরের দিন ওই অফিসে গিয়ে বসেছিলেন বিধায়ক জগদীশ। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে মুহূর্তে তাঁকে ঘিরে ধরেন একদল মানুষ। শেষে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে কোচবিহার শহরে। তার পরে কলকাতায় যান জগদীশ বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে। সেখানে গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের পরিস্থিতিও জানান।

কলকাতা থেকে কয়েক শো কিলোমিটার দূরে, সিতাইয়ে সেই পার্টি অফিসের কাছেই বসেছিলেন পশ্চিম ভাড়ালির আলতাফ মিয়াঁ, মধ্য ভাড়ালি গ্রামের কমল বর্মণেরা। আলতাফ বলেন, “একদিন বাড়িতে গিয়ে দেখি নতুন ইট পড়ে আছে। শুনলাম, আমার নামে কেঁচো সার প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে। পরের দিন ওই ইট তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শুনেছি ওই টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে।” কমল পুরনো তৃণমূল কর্মী। তিনি বলেন, “একটি একটি করে ইট সাজিয়ে এই অফিস গড়ে তুলেছি আমরা। পরে ওই অফিসে সাধারণ মানুষের উপরে নির্যাতনের ছক তৈরি হত। এমনকি, কেউ ভিন্ন মত পোষণ করলে, তাঁকে ওই ঘরে ঢুকিয়ে বেঁধে মারধর কর হত। তাই দল ছেড়ে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption Bribe TMC Sitai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE