Advertisement
E-Paper

ই-শুভেচ্ছায় জেরবার

সম্প্রতি গুগলের সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে ভারতে তিনটির মধ্যে একটি স্মার্টফোনের মেমরি ভরে যায় রোজ। তার কারণ প্রতিদিন অসংখ্য ‘গুড মর্নিং’ মেসেজ।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:২০

শুভেচ্ছার ধুমেই প্রাণান্তকর অবস্থা! একে তো এখন বারো মাসে আঠেরো পার্বণের যুগ। সেই সব উৎসবের শুভেচ্ছা তো আছেই, তার সঙ্গে রয়েছে রোজকার ‘সুপ্রভাত-শুভরাত্রি’র ধাক্কা! হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজের ধাক্কা সামলাতেই জেরবার জীবন।

সম্প্রতি গুগলের সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে ভারতে তিনটির মধ্যে একটি স্মার্টফোনের মেমরি ভরে যায় রোজ। তার কারণ প্রতিদিন অসংখ্য ‘গুড মর্নিং’ মেসেজ। এমন শুভেচ্ছা-স্রোতেই এখন টালমাটাল স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। ফোন ছাড়া এখন জীবন অচল। তাই শাঁখের করাতের অবস্থা সবার।

অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপের সৌজন্যে অনেক কাজ আগের চেয়ে কম সময়ে হচ্ছে। মেলের মাধ্যমে করতে যাতে কিছুটা বাড়তি সময় লাগত। এটা বিরাট সুবিধে।’’ কিন্তু, উল্টোপিঠে অসুবিধেও তো কম নয়, জানাচ্ছেন ‘ফেলুদা’। তাঁর কথায়, ‘‘উফ, কত ধরনের জ্ঞান যে বিলি হয় হোয়াটসঅ্যাপে ভাবা যায় না। কিন্তু, কী করা, ফোন তো বন্ধ করে রাখতে পারব না। সহ্য করতে হয়।’’

যাঁরা এ ধরনের মেসেজে অযাচিতভাবে পাঠান, তাঁরা অনেকেই জানেন ও বোঝেন, প্রাপকের তা পছন্দ নয়। কারণ বারংবার শুভেচ্ছাতেও কোনও প্রত্যুত্তর আসে না। তবুও কেন এমন মেসেজ পাঠানোর প্রবণতা?

মনোবিদরা বলছেন, মূলত নিজেকে তুলে ধরার সুপ্ত ইচ্ছে যেমন নিজস্বী তোলা হয়ে থাকে, হোয়াটসঅ্যাপে লাগাতার মেসেজ পাঠানোর তাগিদটাও তেমন ইচ্ছে থেকেই।

মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অনেকে আছেন, রোজ যতক্ষণ না দু-একটা সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন ততক্ষণ অস্বস্তিতে থাকেন। একইভাবে হোয়াটসঅ্যাপে সকাল-সন্ধে মেসেজ না পাঠাতে পারলে অনেকে অতৃপ্তিতে ভোগেন।’’

গুগলের সমীক্ষাই জানাচ্ছে ইদানিং সেই প্রবণতা কতটা বেড়েছে! আমলা-পুলিশকর্তাদের গ্রুপে-গ্রুপেও কাকভোর থেকে গভীর রাত অবধি নানা মেসেজের স্রোত। নাকাল স্কুল-কলেজের কর্ণধারাও। অভিভাবকদের ‘মেসেজের’ ঠেলায় নামী স্কুলের একাধিক অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষার মোবাইল ভরে ‘হ্যাং’ করে যাচ্ছে।

তাই অনেকে স্মার্ট ফোন ব্যবহারই ছেড়ে দিয়েছেন। কেদারবাবুর অভিজ্ঞতা, ‘‘অনেক বাবা-মা ছেলেমেয়ের এই অভ্যেস ছাড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমাদের কাছেও আসছেন। ঠিকঠাক চিকিৎসা, পরামর্শ মেনে চললেই কিন্তু এই অভ্যেস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’’

তবে হাজার যন্ত্রণা হলেও পালানোর রাস্তা নেই নেতা-মন্ত্রীদের। তাঁরা সকলেই বহু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য।

সেখানে নিয়ম করে একবার গুড মর্নিং, গুড নাইট না লিখলে অনুগামীরা ক্ষুণ্ণ হতে পারেন। আবার সমস্ত উৎসবের শুভেচ্ছা না জানালেও সমালোচনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই অনেক মন্ত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ দেখা-জবাব দেওয়ার কাজ করেন সহকারীরাই। তাঁরাই এই মেসেজ-আক্রমণ এড়াতে মন্ত্রীদের ঢাল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বললেন, ‘‘রাজনীতি করি তো। তাই আমরা কারও নম্বর ব্লক করতে পারব না। যে কোনও ধরনের শুভেচ্ছাই আমাদের কাম্য।’’

Social Media Whatsapp Messages হোয়াটসঅ্যাপ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy