E-Paper

কথা, না-কথার রাখিতেই আলো ছড়ান ওঁরা

জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রনগর তথা ভাটাখানার একটি বিবর্ণ দেওয়ালের ঘরে এমনই এক সৃষ্টির আয়োজন চলে রোজ। মূক ও বধির চার জন বসে রাখি তৈরি করে চলেছেন।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৯
রাখি তৈরি করছেন লক্ষ্মী। পরে আশপাশের সবাইকে কেমন হয়েছে তা ইশারায় জানতে চাইছে।

রাখি তৈরি করছেন লক্ষ্মী। পরে আশপাশের সবাইকে কেমন হয়েছে তা ইশারায় জানতে চাইছে। —নিজস্ব চিত্র।

ভ্রু উঁচিয়ে এক জনের প্রশ্ন। জবাবে মাথা এক দিকে কাত করে অন্য জনের উত্তর। তার পরে, দুটো মুখেই ছড়িয়ে পড়ল অনাবিল হাসি। কোনও কথা হল না। কারণ, ওঁদের কারও কথা বলার ক্ষমতা নেই, শোনারও শক্তি নেই। খড়ের টুকরো কেটে, আঁঠা দিয়ে কাগজে সেঁটে নানা রকম রং করে কাগজের ফুল বসিয়ে রাখি তৈরির কাজে ব্যস্ত ওঁরা। এক একটা রাখি তৈরির পরে, হাতে তুলে নিয়ে অন্যদের দেখিয়ে ইশারায় জানতে চাইছেন, “কেমন হল?” ইশারাতেই উত্তর আসছে, “খুব ভাল।” মুহূর্তে আলো ছড়িয়ে পড়ে নির্বাক মুখগুলিতে।

জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রনগর তথা ভাটাখানার একটি বিবর্ণ দেওয়ালের ঘরে এমনই এক সৃষ্টির আয়োজন চলে রোজ। মূক ও বধির চার জন বসে রাখি তৈরি করে চলেছেন। হাজারেরও বেশি রাখি তৈরি হয়ে গিয়েছে। আরও হাজারখানেক তৈরি হবে। ওঁদের তৈরি পাঁচশো রাখি গিয়েছে কলকাতার একটি স্কুলে, আরও পাঁচশোটি যাবে দিল্লিতে। একটি অনলাইন পণ্য বিক্রির সংস্থা ওঁদের থেকে রাখি কিনছে। বাকি রাখিগুলি জলপাইগুড়ি শহরের কোথাও স্টল তৈরি করে বিক্রির পরিকল্পনা হয়েছে। রাখি বিক্রির লাভের কিছু অংশ মূক-বধির ছেলেমেয়েরা তুলে দেবেন নিজেদের পরিবারের হাতে।

ছাব্বিশ বছরের লক্ষ্মী রায়ের বাড়ি সরকারপাড়ায়। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। মূক ও বধির বলে পড়াশোনায় সমস্যা হত। তার পর থেকে বাড়িতেই থাকতেন। হঠাৎ লক্ষ্মী খোঁজ পান একটি সংস্থার, যারা মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেয়। তার পর থেকে এই কেন্দ্রে এসে কাজ করছেন তিনি। করোনার সময়ে মাস্কও বানিয়েছেন। এক একটি রাখি যখন শেষ হচ্ছে, লক্ষ্মীর মুখ হাসিতে ভরছে। লক্ষ্মীর পাশে বসেই যন্ত্র দিয়ে খড় কাটছিলেন মহাদেব দত্ত। উল্টো দিকে গৌতম পট্টদার রং করছিলেন কাগজে। কোন রাখিতে কোন রং হবে, তা নিয়ে ইশারাতেই কথা চলছিল ওঁদের মধ্যে। একই টেবিলে বসে কাজ করছিলেন কমলা মণ্ডল। তাঁর হাঁটাচলায় সমস্যা। কমলা বলেন, “আমিও ওদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলি। এখন বেশ বুঝতে পারি, ওরা কী বলতে চাইছে। ওরা যখন প্রথম এসেছিল, মুখে হাসিই ছিল না। মূক-বধির ছেলেমেয়েরা ততটা গুরুত্ব পেত না। এখন মাসে অল্প করে রোজগার করে বাড়িতে দেয়, প্রতিদিন হাসিমুখে কাজে আসে, বাড়ি ফিরে যায়।” সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের পুঁজি নেই। খড়, রঙিন কাগজ কেটেই রাখি বানাচ্ছি। অল্প দামে বিক্রি করছি। যা আয় হবে, সকলে ভাগ করে নেব। রাখি চলে গেলে, আবার ধূপকাঠি বানাব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri Specially Abled Person

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy