E-Paper

নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জরুরি

দীপায়ন পাঠক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১০:১৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নজরুল ইসলাম তাঁর নারী কবিতায় লিখেছেন— ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবি মাত্রই তো ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যতই নারীদের উপর প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে তাঁদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, আদতে নারীরাও সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা বিশ্বের উন্নত দেশগুলির দিকে তাকাই তাহলে খুব সহজেই দেখা যাবে, সেখানে নারী আর পুরুষের অধিকার সমান। সেই কারণেই তারা উন্নত দেশের তকমা লাভ করতে পেরেছে। আমাদের প্রাচীন ভারতেও এর অন্যথা ছিল না। লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ী ইত্যাদি নারীরা এক সময় এই দেশের একেবারে উচ্চ আসনে আসীন ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতার কারণে সেই সামাজিক স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

ইদানীং চারিদিকে নারীদের প্রতি বঞ্চনা, শোষণ এবং নির্যাতনের একটি ভয়াবহ চিত্র আমরা লক্ষ্য করছি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে আমাদের দেশের মাননীয়া রাষ্ট্রপতি, দেশের অর্থমন্ত্রী এবং রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এক জন নারী। এই অর্জনও কম বড় নয়। কিন্তু তারপরও গার্হস্থ হিংসা, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, নারী ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আমাদের সমাজ মুক্ত হতে পারছে কই?

এই কারণেই বিগত প্রায় দেড় শতক ধরে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য চলছে আন্দোলন। প্রায় সব পেশাতেই নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে লড়ছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতির অনুপাত পুরুষদের থেকে এখনও অনেক কম। নারী ক্ষমতায়নের জন্য সবার আগে দরকার উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। যদিও এখন নারীদের শিক্ষার হার প্রতিনিয়তই বাড়ছে কিন্তু তবুও সেটা খুব একটা সন্তোষজনক হারে পৌঁছতে পারেনি। উপযুক্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক জীবন যাপন পদ্ধতির দ্রুত প্রচলন দরকার। স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে পারে। বাল্যবিবাহ, নারী পাচারের মতো অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হতে পারে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা।

দ্বিতীয়ত দরকার সামাজিক সুরক্ষা। যাতে বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্র সবখানেই মেয়েরা নিরাপদ থাকে। আজকে বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের দিনে কর্মক্ষেত্রে দিন রাতের বিভাজনের সীমারেখা ক্রমেই কমে আসছে। রাষ্ট্রকেও তার প্রতিটি মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। তাতে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীরাও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

তৃতীয়ত দরকার অর্থনৈতিক সুরক্ষা। যাতে প্রত্যেক নারী নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। তার ফলে তাঁদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা হয়তো অনেকটাই কমতে পারে। ইদানীং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের হাতে সরাসরি অর্থের জোগান দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা চলছে। যাতে তাঁদের নিত্য প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য পরের মুখাপেক্ষী হতে না হয়। এই সমস্ত প্রকল্পের ফলাফল কালের গর্ভে। কিন্তু সবার আগে দরকার নারীদের সব ক্ষেত্রে সমান অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা। তবেই আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে একটি উন্নত দেশ হতে পারব।

লেখক, নাট্যকর্মী, কোচবিহার

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cooch Behar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy