Advertisement
E-Paper

চুপি চুপি ফিরে আসছে প্লাস্টিক

শিলিগুড়ি শহরের বিধান মার্কেটের ফলের বাজার। গরম পড়তেই দোকানিদের পসরা জুড়ে আম লিচুর ছড়াছড়ি। একটু নজর করলেই দেখা যায়, ওজনের পর প্রতিবারই কাঠের ছোট টুল থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন দোকানদার। তাতে বস্তার নীচে সযত্নে রাখা প্লাস্টিক ক্যারিবাগের প্যাকেট। তাতে জলদি ফুল ভরে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতার।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:৪৭
শিলিগুড়ির বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই। ছবি: সন্দীপ পাল

শিলিগুড়ির বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই। ছবি: সন্দীপ পাল

শিলিগুড়ি শহরের বিধান মার্কেটের ফলের বাজার। গরম পড়তেই দোকানিদের পসরা জুড়ে আম লিচুর ছড়াছড়ি। একটু নজর করলেই দেখা যায়, ওজনের পর প্রতিবারই কাঠের ছোট টুল থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন দোকানদার। তাতে বস্তার নীচে সযত্নে রাখা প্লাস্টিক ক্যারিবাগের প্যাকেট। তাতে জলদি ফুল ভরে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতার।

আপত্তি করলে ঝুড়ির পাশ থেকে বের হচ্ছে কাগজের ঠোঙা। বিকালের সুভাষপল্লির সব্জি বাজার। একই ভাবে সব্জি রাখার বস্তার ভিতর থেকে বার করে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে দেদার বিক্রি হচ্ছে লঙ্কা, টমেটো, গাজর, ক্যাপসিকাম থেকে শুরু বিভিন্ন সব্জি। শহরের ঝঙ্কার মোড়, জলপাইমোড়, গেটবাজার, ফুলেশ্বরী, চম্পাসারি, হায়দারপাড়া বাজার থেকে মহাবীরস্থান পুরানো বাজার, সর্বত্র রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ।

বাসিন্দাদের অনেকে আপত্তি করলে অবশ্য বদলে দেওয়া হচ্ছে প্যাকেট। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘ভোটের মরসুমে পুর প্রশাসনের নজরজদারি ঢিলে হতেই শিলিগুড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিবাগ। বড় বড় দোকানে ব্যবহার না হলেও সব্জি, ফল, মাছ বা মাংস থেকে মুদির দোকানে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ শহরের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা জানিয়েছেন, বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়র এ বার ছিলেন শহরে প্রার্থী। মেয়র পারিষদ থেকে শুরু করে তৃণমূল বিরোধী কাউন্সিলরেরা ভোট নিয়ে গত ২-৩ মাস ধরে ব্যস্ত ছিলেন। পুর প্রশাসনের অফিসার, কর্মীরা রোজকার সাধারণ কাজই করে গিয়েছেন। কোনও অভিযান হয়নি। তাতেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন অসাধু প্লাস্টিকের ব্যবসায়ীরা। ভোট শেষ। এবার তা বন্ধ করে শিলিগুড়ির সম্মান রক্ষা করা দরকার।

বিষয়টি শুনেছেন মেয়র তথা সদ্য নির্বাচিত শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের জন্য কিছুটা সমস্যা তো হয়েছেই। এবার কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ আবার মেয়র পারিষদ (সাফাই) মুকুল সেনগুপ্ত জানান, শহরের ক্যারিব্যাগের বাড়বাড়ন্তের কথা শুনেছি। ঢিলেমির প্রশ্ন নেই। গত সপ্তাহেই তাঁরা বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের মুখে একটি বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের এক কর্মী আক্রান্ত হন। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিণ ঘোষণা হতেই অভিযানে পুলিশ পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এখন তা মিটে গিয়েছে। পুর কমিশনারকে প্রতিটি থানাকে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। দ্রুত অভিযান শুরু হয়ে যাবে।’’

এক দশকের আগেও শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিবাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ছিল। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের পুরবোর্ড জোরকদমে তার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। সরকারি ভাবে পুরসভাবে ‘বসুন্ধরা’ পুরস্কারও দেওয়া হয়। সেই সময় বিভাগের দায়িত্ব ছিলেন তৎকালীন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক। বর্তমানে তিনি ৩ নম্বর বরো’র চেয়ারম্যান। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টির সঙ্গে শিলিগুড়ির সম্মান জড়িত। এক দফায় আইনের ফাঁক দিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিবাগ শহরে ছেয়ে যায়। তার পর বহু আন্দোলন হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পষর্দ গণশুনানি করে গত নভেম্বর মাসে ফের নির্দিশিকা জারি করেছে। কিন্তু ভোটের সময় গা ছাড়া হাবভাবে আবার একই অবস্থা হয়েছে।’’ তিনি জানান, তিনি মেয়র পারিষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না। আর কয়েকদিন দেখি, পুরবোর্ড কী করে, নইলে তো আমাদের সরব হতে হবে।’’

তৃণমূল, কংগ্রেস এমনকী বামেদের অনেক কাউন্সিলরই জানিয়েছেন, প্লাস্টিক ক্যারিবাগ বাজারগুলিতে ছেয়ে যাচ্ছে। লুকিয়ে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী তা বাজারে ছাড়ছে। রিকশা, অটো, টোটো, লোকাল বাসে উঠলেই বাসিন্দাদের অনেকেরই হাতে এ সবের দেখা মিলছে। ব্যবসায়ীদের গুদামে, দোকানে অভিযান ছাড়াও বাসিন্দাদের আবার সচেতন করতে জরিমানাও করা দরকার। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের নান্টু পাল বলেন, ‘‘পুরবোর্ড কোনও একটা কাজ ঠিক মতো করতে পারছে না। বারবার বলার পরে কাজ হচ্ছে। আগামী বোর্ড মিটিঙে আমরা বিষয়টি তুলব। গত সরকারের আমলেই নতুন নির্দেশিকা এসে রয়েছে।’’

পুরসভার অফিসারেরা জানান, পাহাড়, উপকূলবর্তী এলাকা ছাড়াও শিলিগুড়ির শহর পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে। এখানে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিবাগ ব্যবহার, বিক্রি বা তৈরি করাটা সঠিক নয়। বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। সেই ভাবেই বাম আমলেই নিষেধাজ্ঞা দারি হয়েছিল। ১১-১২ বছর তা কার্যকর ছিল। কিন্তু একাংশ ব্যবসায়ী গ্রিন ট্রাইবুনালে গিয়ে আবেদন করে। নির্দেশিকা জারির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। গত বছর মাঝামাঝি নতুন করে নির্দেশিকা জারির প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ৩ জুলাই দীনবন্ধু মঞ্চে গণশুনানি হয়। শেষে শিলিগুড়ি শহর ‘ইকো সেন্সিটিভ’ হিসাবে আবার জানিয়ে গত ৩০ নভেম্বর নতুন নির্দেশিকা জারি হয়ে যায়। কিন্তু ভোট প্রক্রিয়া হতেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় ক্যারিবাগ অভিযান।

Plastic Plastic-bag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy