Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খুনের অভিযোগ নিতে অস্বীকার পুলিশের

পুলিশের পরামর্শ মেনে থানায় গিয়েও অভিযোগ না করে ফিরে এলেন হত যুবক মামুদের আত্মীয়রা। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ না নিয়ে তাঁদের কার্যত ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো। তপন থানার পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘চাইলেই তারা অভিযোগ করতে পারেন। কোনও বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। মনে হয় কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
তপন শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০২:০৯
Share: Save:

পুলিশের পরামর্শ মেনে থানায় গিয়েও অভিযোগ না করে ফিরে এলেন হত যুবক মামুদের আত্মীয়রা। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ না নিয়ে তাঁদের কার্যত ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো। তপন থানার পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘চাইলেই তারা অভিযোগ করতে পারেন। কোনও বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। মনে হয় কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

সোমবার সকালে সুমনা খাতুনের পাশে মামুদেরও রক্তাক্ত দেহ পাওয়া গিয়েছিল। মামুদের বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেন, ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। তাঁরা সে কথা পুলিশকে জানালেও লিখিত অভিযোগ করেননি। এ দিন মামুদের জামাইবাবু নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তপন থানায় গেলে পুলিশ পরামর্শ দেয়, কী হবে অভিযোগ করে। তারাই ঘটনার মামলা দায়ের করে তদন্ত করছে বলে পুলিশের তরফে তাকে জানানো হয়। এরপর তিনি ফিরে যান।

তপনের চকনেদইর গ্রামের ছাত্রী সুমনাকে সোমবার সকালে পিছন থেকে হামলা চালিয়েছিল অভিযুক্ত হত যুবক মামুদ হোসেন। সুরতহাল রিপোর্টে তার ঘাড়ে ও পিঠে একাধিক ছুরির আঘাত করা হয় বলে জানানো হয়েছে। হাতের আঙুলেও ছুরির আঘাত রয়েছে। পুলিশের অনুমান নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল সুমনা। তাকে ঘায়েল করার পর সুমনার গলার নলি কেটে দেয় ওই যুবক। এরপরই কিছুটা দূরে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে ছিল অভিযুক্ত মামুদের দেহ। তবে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না মেলায় মামুদের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ দায়ের করা নিয়েও তৈরি হয়েছে টানাপড়েন।

তবে ঘটনার ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও মামুদকে খুনের অভিযোগের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তার পরিবার। ফলে পুলিশও ওই ঘটনা নিয়ে এগোতে চাইছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কিশোরীকে খুন করে অভিযুক্ত যুবকের আত্মহত্যার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে তপন থানার পুলিশ ইতিমধ্যে মামুদের পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছে বলেও কিন্তু অভিযোগ উঠেছে।

মামুদের জামাইবাবু নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এদিন বিকেলে তপন থানায় গিয়েছিলাম বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে। পুলিশ পরামর্শ দিল, ওরাও তো (সুমনার পরিবার) মামুদ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। তাই আমাদের তরফে অভিযোগ করে কী হবে? আমরা (পুলিশ) তো মামলা করেছি। তাই কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আমরা আসতে পারিনি। থানা থেকে ফিরে আসি।’’

চকনেদইর এলাকায় ছাত্রী সুমনাকে খুনে অভিযুক্ত বলে তার পরিবার নিহত মামুদের বিরুদ্ধে তপন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু মামুদের পরিবার থেকে তাকে খুনের অভিযোগের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত অভিযোগ না হওয়ার পিছনে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠত শুরু করেছে। সোমবার ওই ঘটনার পর হত যুবকের দিদি মাসুদা বিবি অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘ভাই সুমনাকে ভালবাসত। রাগের মাথায় হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বদলা নিতে সঙ্গে সঙ্গে তাকে খুন করা হয়েছে।’’ নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে নলি কেটে আত্মহত্যা সম্ভব কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পুলিশকে তারা ওই কথা জানিয়ে পরে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

এদিন মাসুদার স্বামী নজরুল ইসলামে বক্তব্য, ‘‘আমরা এখনও খুনের অভিযোগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। চিন্তা ভাবনা করছি।’’ পুলিশের তরফেও বিষয়টি নিয়ে তেমন হেলদোল দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। তবে দুদিনের মধ্যে ওই ঘটনার সম্পূর্ণ কিনারা হয়ে যাবে।’’

সোমবার রাতে ওই গ্রামের গোরস্তানের উপর দিকে নিহত কিশোরী সুমনার দেহ কবর দেওয়ার পর মামুদের দেহ ওই গোরস্তানের নীচের অংশের মাটিতে কবর দেওয়া হয়েছে। এদিন এলাকা ছিল পুরো থমথমে। গ্রামের ওই মাটির গলির রাস্তায় যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। প্রতিবেশীরা কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। নিহত সুমনার কাকা আব্দুল সামাদ মন্ডল বলেন, ‘‘সোমবার সকালে যখন আমি আদিবাসী পাড়ায় শ্রমিকের খোঁজে গিয়েছিলাম। সে সময় ওই গলির রাস্তায় এলাকার পাঁচ-ছ জন নারী পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে আসতেই খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেময় প্রতিবেশি একজনকেও সেখানে দেখিনি। যেন মুহূর্তের মধ্যে তারা উধাও হয়ে গিয়েছেন। তাদের কেউ কেন ভাইঝির উপর হামলার সময় বাধা দিতে এগোলেন না, বুঝতে পারছি না।’’ মামুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সুমনা কিছু ক্ষণ ধরে প্রতিরোধ করেছিল বলেই তার পিঠের দু’তিন জায়গায় ছুরির আঘাত রয়েছে। হাতের আঙুল কেটে গিয়েছে বলে কাকা আব্দুল সামাদের প্রশ্ন, ‘‘ওই এলাকার বাসিন্দারা সব দেখেও কেন চুপ করে আছেন, বুঝতে পারছি না।’’

হত যুবকের দিদি মাসুদা বিবির খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তিনি দূরে এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছেন বলে জানানো হয়। মামুদের জামাইবাবু নজরুল ইসলামের দাবি, ‘‘ঘটনার পর সোমবার তপন থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ পরামর্শ দেয়, বালুরঘাট হাসপাতালে গিয়ে তাড়াতাড়ি ময়নাতদন্ত করে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা না করলে দেরি হয়ে যাবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ তখন আমাকে বলেছিল, অভিযোগ করার সময় পরেও পাওয়া যাবে। আমরা খুনের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে এদিন থানায় গেলেও পুলিশের ওই পরামর্শ শুনে ফিরে আসি। দেখি কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police murder nazrul islam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE