Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শব্দবাজিতে চোখ বুজে পুলিশ

পুলিশ বাজি উদ্ধার করছে। শব্দবাজি যাতে না ফাটে তার জন্য কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। সে কথা সত্যিও বটে। কিন্তু তারপরেও অভিযোগ ুঠছে নানা জায়গা থেকে যে, পুলিশ চোখ বুজে রয়েছে। পুজো অথবা উৎসবের মরসুমে সাময়িক ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে বাজি বিক্রির অনুমতি দেয় পুলিশকে।

কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় আটক করে আনা হয়েছে শব্দবাজি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় আটক করে আনা হয়েছে শব্দবাজি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

পুলিশ বাজি উদ্ধার করছে। শব্দবাজি যাতে না ফাটে তার জন্য কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। সে কথা সত্যিও বটে। কিন্তু তারপরেও অভিযোগ ুঠছে নানা জায়গা থেকে যে, পুলিশ চোখ বুজে রয়েছে। পুজো অথবা উৎসবের মরসুমে সাময়িক ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে বাজি বিক্রির অনুমতি দেয় পুলিশকে। কিন্তু শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি হোক অথবা কোচবিহার-রায়গঞ্জ রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠেছে বাজির দোকান। পানের দোকান, মনিহারি দোকান এমনকী কোথায় মিষ্টির দোকানের সামনেও বাজির পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ, এই সব দোকানের সিংহভাগেরই অনুমতি নেই। স্রেফ পুলিশ প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে অলিখিত বোঝাপড়ায় দোকান চলছে।

নজরদারি নেই

সেই বোঝাপড়াতেই এই ধরনের দোকানগুলি নিষিদ্ধ শব্দবাজির আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ির এক অনুমোদিত বাজি বিক্রেতা আক্ষেপ করে বললেন, ‘‘পুলিশকে হাত করেই বাজি বিক্রির ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে।’’ শব্দবাজি রুখতে হলে আগে উৎসবে লাগাম দিতে হবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। প্রশাসনের আধিকারিকদের কয়েকজনও দাবি করলেন, অনুমোদিত দোকানে শব্দবাজি বিক্রির প্রবণতা কম। কেননা অভিযোগ হলে বা তল্লাশিতে ধরা পড়লে লাইসেন্স বাতিল হওয়া জরিমানার বিপুল আশঙ্কা থাকে।

সাহেবকে বলা আছে

কিন্তু যে সব দোকানের কোনও অনুমতি নেই, তাদের লাইসেন্স বাতিলের কোনও আশঙ্কাও থাকে না। ইসলামপুরের এক বাজি বিক্রেতার কাছে যেমন অনুমতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে, সাফ জানালেন, ‘‘সাহেব-কে বলা রয়েছে। তিনি হ্যাঁ বলে দিয়েছেন। আবার অনুমতির কী প্রয়োজন।’’ উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই এমন অনুমতি দেওয়ার ‘সাহেব’দের অভাব নেই, তাই কান ফাটানো, বুক কাঁপানো বাজির শব্দেরও বিরাম নেই।

স্টক ক্রমশ প্রকাশ্য

কালীপুজোর বাকি আর তিনদিন। কিন্তু বালুরঘাটে এখনও বাজির শব্দ তেমন শোনা যাচ্ছে না। শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, ‘‘এ বার হলো টা কী?’’ বাজি বাজারে তেমন ধরপাকড়ও হয়নি বলে খবর। নিষিদ্ধ শব্দবাজির দেখা নেই অনেক বাজারে। তবে কী এবার শব্দবাজির তান্ডব সইতে হবে না? যদিও, রহস্য ভাঙলেন এক বাজি বিক্রেতাই। বালুরঘাটে তহবাজারে দীর্ঘদিন ধরে বাজি বিক্রি করা এক ব্যবসায়ী দাবি করলেন, আগে লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি হতো। তাঁর কথায়, ‘‘তখন পুলিশ অভিযান চালিয়ে শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করত। তারপর কালীপুজোর দিন থানার পুজোয় সে সব বাজি পোড়ানো হতো। এ বার তাই স্টক বের করিনি।’’

বাজি দিলে ছাড়

ব্যবসায়ীরা দাবি করলেন, কালীপুজোর দিন এবং তার আগের দিন সব স্টক বের করা হবে। এই কৌশল কিন্তু পুলিশের অজানা নয়। আরেক বিক্রেতার কথায়, ‘‘বরাবরের মতো প্রত্যেক থানা চত্বরের মন্দিরে পুলিশের উদ্যোগে কালীপুজো হচ্ছে। সেই পুজোতে আতসবাজি আমাদেরই সরবরাহ করতে হবে। বিনিময়ে কিছু ছাড় জুটবে।’’ পুলিশের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাওয়া হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘থানায় কোনও আতসবাজি পোড়ানো হয় না। অভিযান চলছে। কোনও ছাড় বা শিথিলতার প্রশ্নই নেই।’’

মহালয়া থেকে শুরু

দেবীপক্ষ শুরুর আগের থেকেই জলপাইগুড়িতে শব্দদানবের তাণ্ডব শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। মহালয়ার আগের রাতে মুহুর্মুহু নিষিদ্ধ বাজির শব্দে শহরবাসীর অনেকেই দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে শহরের একটি নার্সিংহোম থেকে পুলিশে খবরও দেওয়া হয়। যদিও, তাতে পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ। এ বার কালীপুজোর সময় কী পরিস্থিতি হতে পারে তা নিয়েই বুক দুরদুরু বাসিন্দাদের। আশঙ্কার কারণ নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিক্রি রুখতে শহর এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়লেও, শহরতলি কিংবা গ্রাম-গঞ্জে সে ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ শহরতলির বাজার থেকে দেদার বাজি ঢুকছে শহরে। জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের দাবি, ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদেরও সহযোগিতা নিক পুলিশ। শুধু নিয়ম রক্ষার অভিযান করলে চলবে না।’’ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি দাবি করেছেন, জেলার সর্বত্র অভিযান চলছে।

দু’সাউন্ড, সাত সাউন্ড

বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে যে বাজি শহরে ঢুকছে তো খোলাখুলি স্বীকার করে নিচ্ছেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের কয়েকজন। শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন গুদামে সে সব মজুতও হচ্ছে। বিহার থেকেও বাজি ঢোকে ইসলামপুরেও। ১২০-১৫০ টাকা প্যাকেট দরে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ বাজি। দু সাউন্ড, সেভেন সাউন্ড রকমারি শব্দ বাজিও এ বার মিলছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। পুলিশের দাবি, ইসলামপুর শহর তথা ইসলামপুর এলাকাতে লাগাতার অভিযান চালানো হলেও শব্দবাজি পাওয়া যায়নি। তবে সেই বাজিগুলি কোথায় রাখা হয়েছে? অভিযোগ শহর লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামের গুদামে সে সব মজুত করে রাখা হয়েছে বলে দাবি। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থবেঙ্গলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘লাগোয়া বিহার-সহ ভিন রাজ্য থেকে শব্দবাজি ঢোকে শহরে। তা যাতে না হয় পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’ শিলিগুড়ির পুলিশর কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা দাবি করেছেন, সর্বত্র অভিযান চলছে। বাজি ছাড়া অনান্য গুদামেও তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch behar Police fire crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE