Advertisement
E-Paper

অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত অধরা

আলিপুরদুয়ারের বিবেকানন্দ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর অ্যাসিড হামলার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ অভিযুক্ত যুবকের হদিশ পায়নি। ওই যুবক কী ভাবে অ্যাসিড সংগ্রহ করেছেন, সে ব্যাপারেও ধন্দে পড়েছেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৩১
হামলায় অভিযুক্তের বাড়ির সামনে জনতার বিক্ষোভ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

হামলায় অভিযুক্তের বাড়ির সামনে জনতার বিক্ষোভ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

আলিপুরদুয়ারের বিবেকানন্দ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর অ্যাসিড হামলার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ অভিযুক্ত যুবকের হদিশ পায়নি। ওই যুবক কী ভাবে অ্যাসিড সংগ্রহ করেছেন, সে ব্যাপারেও ধন্দে পড়েছেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। সোমবার সকালে জখম ওই ছাত্রীকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রবিবার রাতে ওই হাসপাতালেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। যন্ত্রণা না কমায় পরিবারের লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে ওই ছাত্রী চিনে ফেলেছেন বলেও দাবি করেছেন।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নাম গোবিন্দ মহারাজ ওরফে রাহুল। বাড়ি খোলটা চেকপোস্ট লাগোয়া বাঁধের পাড় এলাকায়। বেশ কিছু দিন ধরেই সে ওই ছাত্রীকে ফোন করে উত্ত্যক্ত করত বলে অভিযোগ। অ্যাসিড হামলার পরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়েও ওই ছাত্রী তাঁকে ধরার চেষ্টা করে খানিকটা দৌড়ন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্ত সাইকেল চেপে পালিয়ে যায়। এদিন অভিযুক্তের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি এলাকায় মিছিল করেন পড়শিরা।

কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ছাত্রীর হাতের কিছু অংশে অ্যাসিড লেগেছে। অভিযুক্ত যুবককে চিহ্নিত করা গিয়েছে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। কোথা থেকে কী ভাবে সে কী অ্যাসিড সংগ্রহ করে হামলা চালায়, তা দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার খোলটা বাজার লাগোয়া এলাকায় বোনের সঙ্গে ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। বাড়ি ফেরার সময় সাইকেল আরোহী দুই যুবক তাদের পিছু নেয়। তাঁদের মধ্যে একজন বোতলের ছিপি খুলে পিছন দিক থেকে আচমকা ওই কলেজ ছাত্রীকে লক্ষ করে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। ছাত্রীর ডান হাত ও কাঁধের একাংশে ওই অ্যাসিড লেগেছে। ঘটনার জেরে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করেন তিনি। ওই অবস্থাতেও তিনি অভিযুক্তকে ধরতে খানিকটা দৌড়োন। তবে সাইকেল আরোহী যুবক ও তাঁর সঙ্গী পালিয়ে যান। অ্যাসিড ছোড়ায় অভিযুক্তকে তরুণী চিহ্নিত পারলেও তাঁর সঙ্গীকে চিনতে পারেননি।

ওই তরুণী বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় রাহুল নামে পরিচিত ওই যুবক আমাকে ফোনে উত্ত্যক্ত করছিল। অশোভন কথাও বলত। প্রতিবাদ করায় দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। ঘটনার সময় তীব্র যন্ত্রণা নিয়েও আমি ওকে ধরার জন্য দৌড়ে ছিলাম। সেই সময় ওই যুবকের আরও একজন সঙ্গী ছিল, তাঁকে অবশ্য আমি চিনতে পারিনি।” নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। ছাত্রীর পরিজনেরা চাইলে চিকিৎসার ব্যাপারে সব রকম সাহায্যও করা হবে।”

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, ছাত্রীর শরীরে সালফিউরিক অ্যাসিড ছুড়ে হামলা চালায় ওই যুবক। সাধারণত সোনা গলানোর কাজে ওই অ্যাসিড দরকার হয়। এ ছাড়াও বিজ্ঞান বিষয়ক পরীক্ষা নিরীক্ষায় ল্যাবরেটরিতে সালফিউরিক অ্যাসিডের ব্যবহার হয়। অভিযুক্ত প্রাথমিকের গণ্ডি পেরনোর পর পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কখনও সব্জি বিক্রি করতেন, কখনও রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন। সেই সূত্রে বাইরের এলাকার কিছু যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ফলে কোনও সোনার দোকানের কর্মচারির কাছ থেকে পরিচিত কারও মাধ্যমে তিনি অ্যাসিড সংগ্রহ করেছিলেন এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “অসামাজিক মানসিক গড়নের লোকেরা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য এমন কাজ করতে পারেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় ঝোঁকের বশেও অনেকে এমন কাজ করে থাকেন। চিকিৎসা পরিভাষায় যা আন্টিসোস্যাল বা সাইকোপ্যাথিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বলা হয়।”

পুলিশ জানায়, জখম ছাত্রীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। বাবা ফল বিক্রি করেন। তিন বোনের মধ্যে তিনি বড়। অন্য দুই বোনের একজন দ্বাদশ শ্রেণির, অন্যজন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জখম ছাত্রীর বোন বলেন, “প্রথমে দিদি অ্যাসিড ছুড়েছে বলে বুঝতে পারেনি। যন্ত্রণা হচ্ছে বলে ওই যুবকের দিকে ‘অসভ্য’ বলে চিৎকার করে তেড়ে যায়।” ঘটনার জেরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁদের বাবা-মা।

অভিযুক্ত যুবকের বাবা মারা গিয়েছেন। তিনি সৎ মায়ের কাছ থাকতেন। তাঁর সৎমা ললিতা মহারাজ বলেন, “কাল থেকে ও বাড়ি ফেরেনি। আমরা কিছু জানি না।” স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জীবন দাস বলেন, “এমন জঘন্য ঘটনায় অভিযুক্তের পাশে এলাকার কেউ নেই।” আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রীর উপরেও সম্প্রতি অ্যাসিড হামলা হয়।

police acid attack alipurduar northbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy