Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কাঠগড়ায় পঞ্চায়েত সদস্যা

মালদহে নাবালিকার বিয়ে রুখল পুলিশ

নাবালিকার বিয়ে রুখতে প্রশাসনের প্রধান ভরসা পঞ্চায়েতগুলি। কিন্তু এ বার এক পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধেই তাঁর নাবালিকা কন্যার বিয়ে আয়োজনের অভিযোগ উঠল।

মালদহের হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র।

মালদহের হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

নাবালিকার বিয়ে রুখতে প্রশাসনের প্রধান ভরসা পঞ্চায়েতগুলি। কিন্তু এ বার এক পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধেই তাঁstiর নাবালিকা কন্যার বিয়ে আয়োজনের অভিযোগ উঠল। শেষ মূহূর্তে অবশ্য খবর পেয়ে সেই চেষ্টা রুখে দিল পুলিশ-প্রশাসন। সোমবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সায়রা এলাকার ওই গ্রামে আরও দুই নাবালিকারও বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। বন্ধ করা হয় সেই দু’টিও।

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্যা রৌশেনারা খাতুন। তাঁর স্বামী আলতাব মিঁয়ার সামান্য জমিজমা রয়েছে। এ দিন তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া জিনম খাতুমের বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল প্রতিবেশী মহম্মদ কাশেদের সঙ্গে। কাশেদ ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। জানা গিয়েছে, তিনি যে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে সে কথা উল্লেখও করেছেন ওই মহিলা।

সন্ধ্যায় আত্মীয়-স্বজনে জমজমাট ছিল তিন বিয়েবাড়িই। চারদিকে হইচই। অপেক্ষা চলছিল বরের। হঠাৎই বাহিনী নিয়ে রৌশেনারার বাড়িতে হাজির হন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি। প্রথমে অবাক হলেও পরে অতিথিরা বুঝতে পারেন কনে নাবালিকা।

পঞ্চায়েত সদস্যার মেয়ের বিয়ে বন্ধ করার পর বাকি দু’টি বাড়িতেও একে একে হাজির হয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কনের বাড়িতে পুলিশ পৌঁছানোর খবর পৌঁছে গিয়েছিল প্রতিবেশী পাত্রপক্ষের কানেও। ফলে তাঁরাও আর কনের বাড়িতে যাওয়ার ঝুঁকি নেননি।

সোমবার রাতে সায়রায় তিন নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে বলে বিডিও-র কাছে খবর পৌঁছায়। এরপরেই বিডিও-র নির্দেশে বিয়েবাড়িতে হাজির হন আইসি দেবাশিস দাস। মেয়েদের ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেবেন না বলে পুলিশকে মুচলেকা দিয়ে পার পান অভিভাবকরা। যদিও পঞ্চায়েত সদস্যা নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে উদ্যোগী হওয়ার ঘটনা জেনে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ দফতর।

হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘একজন পঞ্চায়েত সদস্যা কেন এমন করলেন ভেবে অবাক লাগছে। ওরা কোথায় মানুষকে বোঝাবেন তা না করে নিজেরাই আইন ভাঙছেন।’’

একই পাড়ায় বীরবল দাসের মেয়ে শঙ্করী দাস ও সুনীল মণ্ডলের মেয়ে কাঞ্চন মণ্ডলেরও বিয়ে ছিল এ দিন। শঙ্করী ও কাঞ্চন নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ে। দুজনের বাবাই দিনমজুর। তাঁদের দাবি, ‘‘অভাবের সংসার। ভালো পাত্র পাওয়ায় বিয়ে দিচ্ছিলাম মেয়েদের।’’

আর পঞ্চায়েত সদস্যা রৌশনারা খাতুনের বক্তব্য, ‘‘নাবালিকার বিয়ে যে বেআইনি তা জানি। কিন্তু পাত্রপক্ষ অপেক্ষা করতে চাননি। ১৮ বছর না হলে এখন আর বিয়ে দেব না।’’

কুর্নিশ সহপাঠীদের

একজন ফারহানাজ খাতুন ও অন্যজন সীমা খাতুন। দুজনেই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ র গন্ডি এখনও পেরোয়নি তারা। মালদহের ভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা হলেও নাবালিকা বিয়ে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সংকল্প কিন্তু এক। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা দুজনেই কিছুদিন আগে তাঁদের দুই নাবালিকা সহপাঠীর বিয়ে রুখে দিয়েছে। আর এই কাজে নিজেদের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তো বটেই, জেলা প্রশাসনের কাছেও তাঁরা রোল মডেল হয়ে উঠেছে। ওই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মালদহ জেলা প্রশাসন ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশু সুরক্ষা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সোমবার ফারহানাজকে কুর্নিশও জানাল। সীমাকেও হয়তো পরবর্তীতে একই সম্মান জানানো হতে পারে। রতুয়া ১ ব্লকের কারবোনাতে বাড়ি ফারহানাজ খাতুনের। ফারহানাজ জানায়, সহপাঠীদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ রেহেনাকে এক দিন ক্লাসে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে সে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলেছিল তাঁর বাবা-মা তাঁর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু কোনওমতেই বিয়ে করতে চায় না সে। পরের দিনই ব্লকেরই জাকিরনগরে থাকা রেহেনার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে আটকায়। একই ভাবে সহপাঠীর বিয়ে আটকে রোল মডেল ইসমাইলপুরের সীমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police minor marriage Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE