কোনও দফতরের কাছে ‘নির্দেশ’ নেই, কোনও সংস্থার ‘অর্থ’ নেই, কারও ‘পরিকল্পনা’ নেই। তার জেরে আপাতত জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া করলা নদীর উপরে সেতুগুলির ‘স্বাস্থ্য’ কেমন, তা জানার উপায়ও নেই। অথচ খালি চোখেই শহরের কয়েকটি সেতুর জরাজীর্ণ দশা দেখা যাচ্ছে। কোনও সেতু মাঝবরাবর ক্রমে নীচের দিকে নামছে, কোনও সেতু থেকে চাঙর খসে পড়ছে। পুরনো সেতুগুলির কয়েকটি যখন জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে, সেই সময়ে এক দশক আগে তৈরি হওয়া একটি সেতু শুধু যাতায়াতের পথের ‘অভাবে’ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে।
করলা নদীর উপরে ছয়টি সেতুই শহরের দুই প্রান্তের যোগসূত্র। একাধিক সেতু এক সময় কাঠের ছিল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন সব সেতুই কংক্রিটের। স্বাধীনতার পরে সে সব সেতু পাকা হলেও, তার পরে রক্ষণাবেক্ষণ তেমন ভাবে করা হয়নি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাসকলাইবাড়ির করলা সেতু টিবি হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ার কলেজে শহর থেকে সরাসরি যাতায়াতের একমাত্র পথ। অভিযোগ, সেই সেতুর নিচের অংশের বেহাল দশা। তার রেলিংও দুর্বল। সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। শান্তিপাড়ায় করলা নদীতে রয়েছে ‘নতুন ব্রিজ’ নামে পরিচিত সেতু। সেই সেতুরও একাংশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। তবে স্পোর্টস কমপ্লেক্স সংলগ্ন করলার সেতুর পরিকাঠামো অন্য সেতুর তুলনায় অনেকটাই মজবুত রয়েছে, সেতুটিও নতুন।
যদিও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সেতু দিনবাজারের করলা সেতু। এই সেতুতে দিনের বেশিরভাগ সময়ে যানবাহনের ভিড় থাকে। তার এক প্রান্তে শহরের বাজার, অন্য প্রান্তে সদর হাসপাতাল। সেই সেতুরও মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। সেতুটির ভারবহনের ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে বলে দাবি।
জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক (সদর) তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সেতুর স্বাস্থ্য পূর্ত দফতর দেখে। মাসকলাইবাড়ি সেতুর কিছু দিন আগেই সংস্কার করা করা হয়েছে। বাকি সেতুর কী অবস্থা রয়েছে, নিশ্চয়ই পূর্ত দফতর দেখছে।’’
কী বলছে শহরের সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দফতর?
জলপাইগুড়ি পুরপ্রধান পাপিয়া পাল বলেন, ‘‘সমাজপাড়ার সেতু নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই সেতুর দু’দিকের রাস্তা তৈরি করা হবে। করলা নদীর উপরে শহরের অন্যান্য সেতুর স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে, তা-ও পুরসভা খতিয়ে দেখবে। যদি কোনও সেতুর স্বাস্থ্য বেহাল থাকে, পূর্ত দফতরের অবশ্যই তা জানানো হবে।’’ পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই দফতরের অধীনে থাকা সব সেতুর স্বাস্থ্য মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা হয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)