Advertisement
১১ মে ২০২৪

সাড়া তেমন নেই, তবু বনধে দিনভর হয়রানি

গোটা জেলায় কর্মী সমর্থকের সংখ্যা সাকুল্যে কয়েক হাজার। নৈতিক সমর্থন দিলেও পথে নামেনি বিজেপি। তবুও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা বন্‌ধে দিনভর ভোগান্তির শিকার হলেন রায়গঞ্জের মানুষ। সকাল থেকেই শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। সরকারি বাস চলাচল করলেও পথে নামেনি বেসরকারি বাস।

ভিএইচপির ডাকা বন্ধে সুনসান রাস্তা।

ভিএইচপির ডাকা বন্ধে সুনসান রাস্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

গোটা জেলায় কর্মী সমর্থকের সংখ্যা সাকুল্যে কয়েক হাজার। নৈতিক সমর্থন দিলেও পথে নামেনি বিজেপি। তবুও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা বন্‌ধে দিনভর ভোগান্তির শিকার হলেন রায়গঞ্জের মানুষ।

সকাল থেকেই শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। সরকারি বাস চলাচল করলেও পথে নামেনি বেসরকারি বাস। তাই দিনভর গলদঘর্ম হয়ে শিলিগুড়ি, মালদহ ও বালুরঘাট রুটের বিভিন্ন সরকারি বাসে চেপে গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। শহরের একাধিক এটিএমও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। রায়গঞ্জের এমজি রোড এলাকার ভিএইচপির দফতর সংলগ্ন এলাকার একটি রাষ্টায়ত্ব ব্যাঙ্ক সহ আরও কয়েকটি ব্যাঙ্কও বন্ধ রাখা হয়। ক্লাস হয়নি শহরের অধিকাংশ স্কুল কলেজে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের একটি বড় অংশ হাজির না হওয়ায় আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ ঘোষ। সবটাই নিরাপত্তার স্বার্থে। এমনটাই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির।

জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক বলেন, ‘‘যে কোনও বনধে রাস্তায় গাড়ি নামালে ভাঙচুরের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া নিরাপত্তার অভাববোধ করেন চালক ও কনডাক্টাররা। সেইকারণেই, এদিন বেসরকারি বাস বন্ধ ছিল।’’ তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন রুটে ট্রেকার ও অটো চলাচল স্বাভাবিক ছিল। শিলিগুড়ি, মালদহ ও বালুরঘাট থেকে বিভিন্ন বাস যাত্রীদের নিয়ে রায়গঞ্জে এসে ফিরে গিয়েছে। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম ও রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনু বন্ধু লাহিড়ীও জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রায়গঞ্জের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখেছিলেন।


সরকারি বাসে উঠতে যাত্রীদের ভিড়। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

এমনকি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘কেউ ঝামেলায় জড়াতে চাননা বলেই শহরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেসরকারি বাসও চলাচল করেনি।’’তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন এদিনের বনধ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলার কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি, চোপড়া, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর-১ ও চাকুলিয়া ব্লকে বনধের তেমন প্রভাব পড়েনি। কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় দোকান ও বাজার খোলা ছিল। তবে পড়ুয়াদের অভাবে বিভিন্ন হাই ও প্রাথমিক স্কুল সহ কলেজে ক্লাস হয়নি।

মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে নির্ধারিত প্রবীণ তোগাড়িয়ার সভায় মাইক বাজানোর অনুমতির দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। জেলাশাসক সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করায় জোর করে সভা করারও হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হয়। এরপর প্রবীণ তোগাড়িয়ার এ রাজ্যে আসার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ ও সভা পণ্ড করার অভিযোগে সোমবার উত্তর দিনাজপুরে ১২ বন্‌ধের ডাক দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

এদিন সকালে রায়গঞ্জের ঘড়িমোড় ও কসবা এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে তিন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ১৫১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে থানা থেকেই তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী। রায়গঞ্জের ডিএসপি শুভেন্দু মন্ডল জানান, বনধকে কেন্দ্র করে জেলার কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলাজুড়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

বিএইচপির উত্তরবঙ্গের সংগঠন সম্পাদক গৌতম সরকারের দাবি, বিএইচপি জোর করে বনধ করার পক্ষপাতি নয়। বাসিন্দারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বনধকে সমর্থন করে পুলিশ ও প্রশাসনের বেআইনি কাজকর্মের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE