বছর দু’য়েক আগের এক শীতের রাত। নিজের ছোট গাড়ি নিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে জলপাইগুড়িতে বাড়িতে ফিরছিলেন প্রদীপ রাই। গাড়ি চালানোই তাঁর পেশা। তখনই তিনি দেখেন, রাস্তার পাশে একটি গাড়ির ইঞ্জিন চলছে, কিন্তু চালক সংজ্ঞাহীন। অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করেন আশেপাশে। একাধিক নম্বরে ফোন করলেও জবাব মেলেনি। শেষে নিজের গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়ে যান অসুস্থ সেই চালককে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে জানা যায়, সেই চালক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সেই থেকে শুরু। তার পরে গভীর রাতে আশেপাশে কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলেই প্রয়োজনে প্রদীপ নিজের গাড়িতে তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। রোগী পৌঁছনোর জন্য কোনও টাকা নেন না প্রদীপ। রাত দশটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের গাড়িতেই রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রদীপ।
জলপাইগুড়ির কলেজপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ। শহর ও শহরতলির বাসিন্দাদের প্রয়োজনে রাতে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের জেলা সদর হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পৌঁছে দেন তিনি। তাঁর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খান বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ সত্যিই যথেষ্টই প্রশংসার। সরকারি ভাবে যদি কখনও কোনও প্রয়োজন হয়, আমরা প্রদীপ রাইকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’ অসুস্থদের হাসপাতালে পৌঁছতে নিজের গাড়ি ব্যবহার করলেও তেল খরচ হয়। সেই তেলেরও খরচ দেন প্রদীপ। তাঁর কথায়, “শহরের রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিই। কতটুকুই বা তেল লাগে। সে হিসেব না হয় নাই বা করলাম।”
বছর ছত্রিশের প্রদীপ তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও গড়ে তুলেছেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নানা সেবামূলক পরিষেবা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ। রক্তও জোগাড় করেন তাঁরা। প্রদীপ বলেন, ‘‘সমাজের জন্য সকলেরই খানিকটা দায়িত্ব রয়েছে। রাতে সাধারণত জলপাইগুড়ি শহরে জরুরি প্রয়োজনে পরিবহণ পাওয়া অসুবিধার। হাসপাতালে রোগীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও তুলনামূলক ভাবে কম রয়েছে। রাত দশটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত আমার নিজের গাড়ি নিয়ে রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছি। আমার সহকর্মীদেরও এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আবেদন জানাই।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)