Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বরাদ্দর চেয়ে দাম বেশি

সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শেষ দৃশ্য। বনবাংলো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে চার বন্ধুর গাড়ি। টিফিন বাক্স খুলে রবি ঘোষ বের করে আনলেন একটি সেদ্ধ ডিম। সঙ্গে অনবদ্য ভঙ্গিতে সংলাপ, ‘ডিম মাইরি!’

অগত্যা: ডিমের দাম বাড়ায় মুরগির বিক্রি বাড়ছে। নিজস্ব চিত্র

অগত্যা: ডিমের দাম বাড়ায় মুরগির বিক্রি বাড়ছে। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শেষ দৃশ্য। বনবাংলো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে চার বন্ধুর গাড়ি। টিফিন বাক্স খুলে রবি ঘোষ বের করে আনলেন একটি সেদ্ধ ডিম। সঙ্গে অনবদ্য ভঙ্গিতে সংলাপ, ‘ডিম মাইরি!’ বঙ্গ জীবনের অন্যতম অঙ্গ সেই ডিমের দাম হঠাৎই চড়ছে। ফলে এগরোলের দাম বাড়ার যেমন আশঙ্কা, তেমনই টান পড়েছে মিড ডে মিলে। স্কুলে স্কুলে ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ দ্বিতীয় পর্ব

শুধু সোমবার

কোচবিহার: প্রাথমিক একজন ছাত্রের জন্য ৪ টাকা ১৩ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। হাইস্কুলের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণি ৪ টাকা ১৩ পয়সা, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্য়ন্ত ৬ টাকার কিছু বেশি রয়েছে। কিন্তু একটা ডিমেরই দাম এখন সাত টাকা। তাই দাম বাড়তেই মিড ডে মিলে ডিমের পরিমাণ কমে গিয়েছে কোচবিহারের স্কুলগুলিতে। কেউ দু’দিনের জায়গায় একদিন ডিম করেছেন। কেউ কেউ আবার এখন পর্যন্ত দু’দিন ডিম রাখলেও আখেরে তা কত দিন টানা সম্ভব হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। কোচবিহার আঞ্জুমান ই-ইসলামিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস কর তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, “সপ্তাহে একদিন করে ডিম আমাদের দেওয়া হয়। কোনও কোনও সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়া হয়। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সমস্যায় পড়তে হয়েছে।” তাঁরা গত সোমবার মিড ডে মিলে ডিম দিয়েছিলেন। আবার আগামী সোমবার দেওয়ার কথা। দিনহাটার সাতকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ধর্মেন্দ্র সিংহ জানান, শুক্রবারও তাঁরা মিড ডে মিলে ডিম দিয়েছেন। এখন একটি ডিম ৭ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “ডিম এখনও দেওয়া হচ্ছে। কতদিন চলবে জানি না।”

বর্তমানে হাইস্কুলগুলিতে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। সেই কারণে নিচু ক্লাস ছুটি রয়েছে। তাই মিডডে মিল বন্ধ রয়েছে। কুশশারহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুময় সাহা বলেন, “এখন মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে স্কুলে। পরপর পরীক্ষা রয়েছে। স্কুল খোলার পরেই বিষয়টি বোঝা যাবে। দাম বাড়াটা অবশ্যই সমস্যা হবে।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “স্কুলের মিড ডে মিলে ডিম দেওয়া হচ্ছে কি না, তার বিস্তারিত রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।”

ডিমের বদলে পনির

বালুরঘাট: একেই ডিমের চড়া দামে প্রাথমিক স্কুল ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির মিড ডে মিল পরিচালনা নিয়ে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার উপর মিড ডে নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে চরম ক্ষোভ ছড়িয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের একাংশ শিক্ষক মহলে।

তা ছাড়া অন্য আনাজের দামও দ্বিগুনের বেশি চড়েছে। সমস্যা না মিটিয়ে পরিস্থিতির নজর ঘোরাতেই কি শিক্ষামন্ত্রীর ওই দোষারোপ। প্রশ্ন তুলে সরব প্রাথমিক শিক্ষকেরা। এ জেলার বাম সমর্থিত নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি থেকে সারা বাংলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, ‘‘আমরা বহু আগে থেকেই মিড ডে মিল পরিচালনা থেকে অব্যাহতি চেয়ে বার বার দরবার করেছি। স্বনির্ভর দলকে ওই দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষকদের মিডডে থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। সরকার কোনও কথাই শুনছে না।’’ এ জেলার তপন ব্লকের মালঞ্চা অঞ্চলের এক প্রাথমিক শিক্ষককের বক্তব্য, বর্তমান বাজারের যা অবস্থা তাতে মিড ডে মিলে শিশুদের পাতে ডাল ভাত তরকারি দিতেই টানাটানি অবস্থা। অনেক স্কুল ডিমের বদলে পণিরের তরকারিতে ঝুঁকছেন।

বালুরঘাটের ডিম বিক্রেতারা জানান, অন্ধ্র থেকে ডিমের আমদানি কম। তাই পাইকারি এক পাতা (৩০টি) ডিমের দাম ১৮০ টাকা। খুচরো প্রতিটি ডিম ৭ টাকা। আপাতত ডিমের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গিয়েছে। তাই পনিরের উপরেই ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eggs Hen Price Rise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE