ফালাকাটার ছোট শালকুমারের বিরসা বিদ্যাভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে গান গাইছেন বন্দিরা। ছবি: রাজকুমার মোদক
‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ লোকসঙ্গীতের এই সুর শোনালেন জলপাইগুড়ির কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিরা। তার আগেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে তাঁদের অনুষ্ঠান শুরু করে বন্দিরা। ফালাকাটার ছোটশালকুমারের বিরসা বিদ্যা ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে পাঁচ বন্দির কেউ গাইলেন গান, কেউ তবলা,দোতরা বাজিয়ে মাতিয়ে দিল দর্শকদের।
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিরসা বিদ্যাভবনে এসেছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রায়গঞ্জের বাসিন্দা সহদেব সরকার, জলপাইগুড়ির জমিদারপাড়ার ক্ষীতীশ রায় এবং ধূপগুড়ির গোঁসাইহাটের আখরাবাদক কৌশিক রায়, কোচবিহারের সিতাইয়ের দোতরাবাদক স্বপন বর্মন ও হলদিবাড়ির তবলাবাদক গোপাল শূর। বন্দিদের সঙ্গেই এসেছিলেন সংশোধনাগারের মুখ্য কারারক্ষী, বঙ্গীয় কারা রক্ষী সমিতির সম্পাদক সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। কড়া নিরাপত্তায় বন্দীদের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
শুধু বিরসা বিদ্যাভবনেই নয়। ২০১৩ সালে এই বন্দি শিল্পীরা ছাত্র-যুব উৎসবে দেশাত্ববোধক গান গেয়ে রাজ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছিল। তারপর আবার ২০১৫ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় প্রথম হয়। যাব্বজীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি সহদেব সরকার বলেন, “২০০৮ সালে জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারে আসি। আগে থেকেই আমার গানের প্রতি টান ছিল। তৎকালীন জেল সুপার বিমলেন্দু মুখোপাধ্যায় আমাকে গান শেখার পরামর্শ দেন। তারপর আমি সংশোধনাগারের গান জানা বন্দিদের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি।’’
সহদেব সরকার যেমন সংশোধনাগারে শিখেছেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ক্ষীতীশ রায় সংশোধনাগারে আসার আগে থেকে ভাওয়াইয়া ও লোকসঙ্গীত গাইতেন। দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গোপাল শূর বলেন, “সংশোধনাগারের আসার আগেই তবলায় বিশারদ হই।” জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মুখ্য কারারক্ষী কেয়ামত মোল্লা জানান, সংশোধনাগারের যে সব বন্দিরা গান বাজনা জানে বা শিখতে আগ্রহী তাদের সপ্তাহে ছ’দিন তালিম দেন বিভিন্ন শিক্ষক।
বিরসা বিদ্যাভবনের পরিচালন কমিটি তথা উৎসব কমিটির সভাপতি কল্লোল নট্ট বলেন, “তিন দিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে সংশোধনাগারের বন্দিদের দিয়ে অনুষ্ঠান করাব পরিকল্পনা করেই আমরা জলপাইগুড়ি জেলের সুপারের কাছে আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন রাজ্যের ডিজি। বন্দিদের এই প্রচেষ্টা মানুষের সামনে তুলে ধরতেই উদ্যোগী হয়েছিলাম আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy