সরকারি না বেসরকারি এই টানাপড়েনে, শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলে অচলাবস্থা চলছেই। তার জেরে স্কুলের এবছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষক ও ছাত্রদের একাংশের।
গোলমালের জেরে গত শনিবার থেকে স্কুলের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। স্কুলটি সোসাইটির অধীনে এবং বেসরকারি বলে দাবি করে কর্মকর্তারা গত ২৮ অগস্ট প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষক-ছাত্র এবং অভিভাবকদের একাংশ। মঙ্গলবারও শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেয় ওই ছাত্র-অভিভাবকরা। নব নিযুক্ত প্রধান শিক্ষককেও তাঁরা সমস্যা না মেটা পর্যন্ত স্কুল পরিচালনা করতে নিষেধ করেন। এ দিন পুলিশে অভিযোগ জানান, প্রধান শিক্ষক।
অন্য দিকে ছাত্রদের নিয়ে এ দিন মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে সমস্যার কথা জানান ওই স্কুলের সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা। ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রথম দফার রেজিস্ট্রেশন ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
স্কুলটি বেসরকারি বলে কর্তৃপক্ষের একাংশ দাবি করলেও তা নিয়ে মামলা চলছে। সমস্যা নিয়ে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে গেলেও সেখান থেকে কোনও রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। সোমবার অভিভাবক মঞ্চ সমস্যা মেটাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্যর অভিযোগ, ২০০৩ সালের আগে থেকেই স্কুলে সমস্যা চলছে। তা মেটাতে সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশের দুর্নীতিতে ছাত্রদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।
স্কুলে ওই সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই শিক্ষক-অভিভাবকদের একাংশের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের গোলমাল চলছিল। এ বছর গোড়ার দিকে স্কুলে ভর্তির জন্য মাত্রাতিরিক্ত ফি নিতে গেলে বাধা দেন অভিভাবক মঞ্চ। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক এবং স্কুল পরিদর্শকের হস্তক্ষেপে সরকারি হারে ২৪০ টাকা করে ফি নিয়েই ছাত্রদের ভর্তি করানো হয়। মিড ডে মিল নিয়ে গোলমালের জেরে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করলে স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে বৈশাখী দাস নামে এক শিক্ষিকাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্কুলটি একটি সোসাইটির অধীন দাবি করে সমিতির লোকজন তা অবশ্য মানতে চাননি। তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালত ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। ওই নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে সমিতির লোকজন আদালত অবমাননার অভিযোগ করলে বৈশাখী দেবীকে পদ থেকে সরিয়ে দেন স্কুল পরিদর্শক। এর পরেই সোসাইটির তরফে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অবৈধ ভাবে ওই নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদ জানিয়ে গত শনিবার স্কুলে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ঢুকতে দেয়নি ছাত্র-অভিভাবকদের একাংশ।
সোসাইটির তরফে সীতারাম ডালমিয়া বলেন, “স্কুলটি বেসরকারি। তাই আমরা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেছি। কিছু শিক্ষক-অভিভাবক ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে সমস্যা তৈরি করতে চাইছে। ছাত্রদের ভর্তির ফি আমাদের দেওয়া হয়নি। কিছু শিক্ষক-অভিভাবক শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুল অভিভাবক সমিতির নামে ওই টাকা তুলে তাঁদের কাছে রেখেছেন।” স্কুলের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বৈশাখী দাস বলেন, “অভিভাবক সমিতি কী টাকা তুলেছে জানা নেই। তবে ছাত্রদের ভর্তির ফি সমস্তই স্কুলের তহবিলে জমা করা হয়েছে। তার নথিও রয়েছে।” এ দিন ছাত্ররা অভিযোগ করেন, সরকারি নিয়ম মেনে প্রধানশিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্রকে হুমকি দিচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হবে না। কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy