Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যৌনপল্লিতে প্রথমবার রবীন্দ্র-নজরুল

রবিবার বিকেলে প্রিয়গঞ্জ কলোনির যৌনপল্লিতে প্রথমবার রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যার আয়োজন হয়। উদ্যোক্তা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি ও পাতাকুঁড়ি উত্তরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

ওদের কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা নজরুল ইসলামের নাম আগে শোনেননি। কেউ আবার নাম শুনেছিলেন কিন্তু তাঁদের গান-নাচ নিয়ে মঞ্চস্থ অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পাননি। কিন্তু সাউন্ড বক্সে ‘আগুনের পরশ মণি’ থেকে ‘ঊর্ধব গগনে বাজে মাদল’ শুনে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে পারলেন না কেউ। দ্বিধা কাটিয়ে সোজা মঞ্চমুখী হলেন অনেকেই। পেশাগত ব্যস্ততা ভুলে রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যায় মাতলেন কোচবিহারের যৌনপল্লির বাসিন্দারা। মুহূর্তে আট থেকে আশি নানা বয়সীদের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা রইল না প্রিয়গঞ্জ কলোনিতে।

রবিবার বিকেলে প্রিয়গঞ্জ কলোনির যৌনপল্লিতে প্রথমবার রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যার আয়োজন হয়। উদ্যোক্তা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি ও পাতাকুঁড়ি উত্তরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা। যৌনকর্মীদের কয়েক জন জানান, এলাকার ছেলেপুলেরাও যেন টাটকা বাতাস পেল। আয়োজকরা জানান, ফি বছর দুর্গাপুজোয় ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ বার দোলে প্রথমবার বসন্ত উৎসব করা হয়। তাতেই মূলত এলাকার শিশু-কিশোরদের পারফর্ম্যান্স সকলের নজর কাড়ে। স্কুল পড়ুয়া ওই কিশোরদের কয়েক জন এ বার রবীন্দ্র–নজরুল স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আবদার জুড়ে দেয়। সেই সূত্রে এই অনুষ্ঠানের ভাবনার সূত্রপাত।

আরও খবর
মহাকাশ অলিম্পিয়াডে সফল আরামবাগের সৌম্যজিৎ

অনুষ্ঠানে খুশি সকলেই। যৌনপল্লির বাসিন্দা এক তরুণী সাঁজু (নাম পরিবর্তিত) তো বলেই দিলেন, “মঞ্চের সামনে যাঁদের ছবি ছিল তাঁদের নামও জানি না। কখনও কেউ সে ভাবে বলেওনি। এ দিনের অনুষ্ঠান দেখে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের নাম দু’খানি সারাজীবনের জন্য মনে গেঁথে গেল।” অন্য এক মহিলা সোনি (নাম পরিবর্তিত) বলেন, “আমি অনেক বছর থেকে এখানেই আছি। বক্সের আওয়াজ শুনে কাজ ফেলে ছুটে চলে এসেছি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে নিয়ে কেন পাড়ায় পাড়ায় এত অনুষ্ঠান হয়, তা না এলে জানাই হত না।”

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির কোচবিহার শাখার সম্পাদক রেখা রায় বলেন, “ছোটদের আবদারেই এবার প্রথম রবীন্দ্র-নজরুলকে নিয়ে এমন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পেশাগত কাজ উপেক্ষা করে বড়রাও দারুণ সাড়া দিয়েছেন।” পাতাকুঁড়ি উত্তরণ সংস্থার সদস্য সঙ্গীত শিল্পী অর্ক্য মহালনবিশ নিজেও ছিলেন যৌনপল্লির ছোটদের অন্যতম প্রশিক্ষক। তিনি বলেন, “সাত দিনে যতটা পেরেছি শেখানোর চেষ্টা করেছি। নাচ-গান সব মিলিয়ে তিরিশ জন শিশু-কিশোর যোগ দেয়।”

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “অভাবনীয় উদ্যোগ। আমরাও চাই এ ভাবেই দুই কবির প্রাসঙ্গিকতার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে যাক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE