স্মৃতি: এই বাড়ির খোলা বারান্দাতেই প্রতিমা দেবী আয়োজন করতেন রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। নিজস্ব চিত্র
আসছে পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী পালন উপলক্ষে সাজ সাজ রব উত্তর জুড়ে। কোথাও জোরকদমে চলছে চিত্রাঙ্গদা-র মহড়া। তো রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত গৌরীপুর লজে চলছে প্রভাতী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। রবীন্দ্র স্মরণের দৌড়ে পিছিয়ে নেই বাংলা ব্যান্ডও। ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে রবীন্দ্র ভাবনার আলোচনাও হয়ে উঠবে স্মরণের অন্যতম বিষয়।
কালিম্পং ও দার্জিলিং
পঞ্চাশের দশক। কালিম্পংয়ের টাউন হল। ২৫ বৈশাখের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। আয়োজক মিলনী ক্লাব। ক্লাবের বয়স ৮৯ বছর। শুরু থেকেই রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে এই সান্ধ্য অনুষ্ঠানটি করে আসছে তারা। প্রতিমা দেবী তাঁর বাড়ি ‘চিত্রভানু’ থেকে চলে আসতেন টাউন হলে।
৭৭ বছরের রেখা মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি অনুসারে, চার-পাঁচ বছর অন্তত প্রতিমা দেবীকে এই পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানে তিনি দেখেছেন। একেবারে সামনের সারিতে বসে তিনি অনুষ্ঠান দেখতেন। আর সেই পুত্রবধূ স্বয়ং কেমন ভাবে পালন করতেন ‘বাবামশায়ের’ জন্মদিনটি? ‘‘সে সময়ে কালিম্পংয়ে বাঙালির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ‘চিত্রভানু’ বাড়িটির উত্তর দিকে খোলা গোল বারান্দায় পালিত হত কবির জন্মদিন। পাহাড়িয়ারা তো ছিলই, পাশাপাশি প্রতিমা দেবীর আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতন থেকে অনেকে চলে আসতেন এই জন্মজয়ন্তীতে যোগ দিতে।’’ জানালেন চিত্রভানু-র প্রাক্তন পরিচালক নন্দিতা সেন মজুমদার। মিলনী ক্লাবের প্রভাতী অনুষ্ঠানটি এক সময় পালিত হত চিত্রভানু-র প্রাঙ্গণে। সেখানে চিত্রভানুর আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট-এর ছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দিতেন ক্লাবের সদস্যরা।
গত ষোলো বছর অবশ্য রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত গৌরীপুর লজে প্রভাতী অনুষ্ঠানটি হয়ে আসছে। ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি মণীন্দ্রলাল ভট্টাচার্য জানান, বাঙালির কাছে এটি একটি পুণ্যস্থান। বাড়িটির অবস্থা জরাজীর্ণ। সংরক্ষণের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই সকালের অনুষ্ঠানটি এখানে করা হয়। সান্ধ্য অনুষ্ঠানে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি ভাষাতেও পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রগান ও কবিতা। বাঙালি ছাড়াও এতে যোগ দেন হিন্দি, নেপালি, লেপচা-ভাষী ও জনজাতির মানুষজন। কখনও পর্যটকরাও এই অনুষ্ঠানে শামিল হন। গত কয়েক বছর ধরে তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে অনুষ্ঠাটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর জেলা শহরের প্রায় সব ক’টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এতে যোগ দেবে বলে জানান মিলনী ক্লাবের সহসভাপতি কাজল মুখোপাধ্যায়।
ও দিকে দার্জিলিংয়ে নৃত্যশিক্ষক মৌমিতা বিশ্বাসের পরিচালনায় জোরকদমে চলছে ‘চিত্রাঙ্গদা’-র মহড়া। মঞ্চস্থ হবে নৃপেন্দ্রনারায়ণ বাঙালি হিন্দু হলের অডিটোরিয়ামে। ফি বছরের মতো এ বারও যোগ দেবে সদস্যদের ছেলে-মেয়েরাই। সংস্থার সম্পাদক প্রতাপ গুহ জানান ‘‘তথ্যসংস্কৃতি দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমরা অনুষ্ঠানটি করছি। উদ্বোধন করবেন দার্জিলিং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সম্পাদক স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ।
বালুরঘাট
‘রবিনন্দন’-র উদ্যোগে পঁচিশে বৈশাখে করা হবে প্রভাতফেরি। মন্মথ নাট্যচর্চা কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কচিকাঁচাদের সঙ্গে যোগ দেবেন অন্য শিল্পীরাও। ‘প্রজ্ঞা ডান্স অ্যাকাডেমি’-র রবীন্দ্র স্মরণ অনুষ্ঠানটি হবে ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের মাঠে। তাঁদের এই আয়োজনে সামিল হচ্ছে বাংলা ব্যান্ড ‘মাভৈঃ’। ‘প্রধান নাগরিক মঞ্চ’ তাদের জমায়েত স্থল ‘অবসর গৃহে’ ঘরোয়া ভাবে পালন করবে দিনটি। ‘নৃত্যাঞ্জলি’ বনলতা পার্কে বিকেলে আয়োজন করছে একটি অনুষ্ঠানের।
রায়গঞ্জ
রায়গঞ্জ মধ্য মোহনবাটি গ্রন্থাগারের উদ্যোগে পালিত হবে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথের ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে থাকছে আলোচনা। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy