রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের সুভাষগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ইউনুস আলি। দিনমজুরির কাজ করেন। রবিবার দুপুরে কুলিকের জলে জাল ফেলেছেন তিনি। কুলিক পক্ষিনিবাসের পাশে তাঁর একাগ্র চেষ্টায় উঠতে লাগল কখনও প্রতিমার কাঠের টুকরো, কখনও প্লাস্টিক বা সিমেন্টের ফেলে দেওয়া বস্তা। সঙ্গে অবশ্য ফাউ হিসেবে কিছু পুঁটি আর চিংড়িও পেলেন তিনি।
দিনের শেষে বাড়ি ফেরার পথে আফসোস ইউনুসের, ‘‘তিন বছর আগেও এই নদীতে জাল ফেললে বোয়াল, গলদা চিংড়ি, কাতল বা রুই উঠত। এখন কিছুই মেলে না।’’
রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের পরিযায়ী পাখিদের খাবারের সংগ্রহের প্রধান ভরসা এই কুলিক নদী। প্রতি বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পক্ষিনিবাসে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরন, করমোর্যান্ট, ইগ্রেট-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে। পরিযায়ীরা কুলিক নদীর মাছ, জলজ পোকা ও শ্যাওলা খেয়ে বেঁচে থাকে। পরিবেশ ও পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির অভিযোগ, প্রশাসন ও বন দফতরের নজরদারির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাসিন্দাদের একাংশ কুলিক নদীতে আবর্জনা ফেলছেন। দিনভর বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি নদীতে নামিয়ে ধোয়া হয়। এই দূষণেই নদীতে মাছ, জলজ পোকা ও শ্যাওলার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বসেছে। পাশাপাশি, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নদী সংস্কার ও পলি তোলার কাজ হয়নি। তাই নদীর নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে বর্তমানে গরমের শুখা মরসুমে নদীর বিভিন্ন অংশে জল শুকিয়ে চর পড়েছে। অনেক জায়গায় বাসিন্দারা হেঁটেই নদী পারাপার করতে পারেন। তাঁদের কথায়, প্রশাসন ও বন দফতর নদী দূষণ রুখে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী না হলে, ভবিষ্যতে খাবারের সঙ্কটে পড়বে পাখিরাও।