কারও দোকানে তালা। কারও বা বাড়িতে গিয়ে হুমকি। বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগই তুলেছিলেন সাবেক ছিটমহলের অনেক বাসিন্দা। সোমবার সেই বাসিন্দারাই যোগ দিলেন তৃণমূলে। দিনহাটার সুভাষ ভবনের সামনে মঞ্চ তৈরি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই বাসিন্দাদের দলে নেওয়া হয়। তবে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, ক্রমাগত ভয় দেখিয়ে ওই বাসিন্দাদের দলে টেনেছে শাসক দল। এখনও যারা তৃণমূলে নাম লেখাননি তাঁদেরকেও নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে।
তবে ভয় দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁরা বলেন, “এতদিন সাবেক ছিটমহলের মানুষকে নানাভাবে ভুল বোঝানো হচ্ছিল। তৃণমূলে ওই বাসিন্দাদের পাশে বরাবর ছিল। সেটা বুঝতে পেরেই তাঁরা দলে এসেছেন।” তবে অনেকে বলছেন, সরাসরি না হলেও ওই বক্তব্য যে মানব অধিকার সমন্বয় রক্ষা কমিটিরর মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্তকে নিয়ে করা হয়েছে তা স্পষ্ট। দীপ্তিমানবাবু আর কয়েকদিন পরেই বিজেপিতে যোগদান করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের উপরে অত্যাচার শুরু হয় বিধানসভার পরেই। ভয় পেয়ে মানুষ তৃণমূলে গিয়েছে। তবে কতজন তাঁদের সঙ্গে থাকবেন তা আগামী লোকসভায় পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
সাবেক ছিটমহলে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীপ্তিমানবাবু। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সরাসরি না হলেও পরোক্ষে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন দীপ্তিমানবাবু। নির্বাচনের ফলে দেখা যায় সাবেক ছিটমহলগুলিতে ভাল রকমের ভোটে পিছিয়ে ছিলেন উদয়নবাবু। পোয়াতুরকুঠি সাবেক ছিটমহলে যেখানে জোট প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯৯০টি ভোট সেখানে উদয়নবাবু পেয়েছিলেন মাত্র ১৪৪টি ভোট। তা নিয়ে তৃণমূল শিবিরে বিশেষ করে উদয়নবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
দীপ্তিমানবাবুর পাশে থাকা ওই ছিটমহলের বাসিন্দা মনসুর আলি মিয়াঁ, সাদ্দাম হোসেনকে ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। মনসুর আলির দুই ছেলে এবং সাদ্দামের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সাদ্দাম এবং মনসুর আলির এক ছেলে মহির মিয়াঁও এদিন তৃণমুলে যোগ দেন। তাঁরা অবশ্য বলেন, “ভয়ের কোনও ব্যাপার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজে সামিল হতে চেয়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।” দীপ্তিমানবাবুর সঙ্গে গেলেন না কেন, এই প্রশ্ন করা হলে সাদ্দাম বলেন, “এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”