পুলিশি ঘেরাটোপে বোর্ড অফ কাউন্সিলরের সভায় গৃহীত হল মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর পদত্যাগ পত্র। শুক্রবার দুপুরে পুরসভার কনফারেন্স হলে প্রশাসনের বিশেষ বৈঠকে কৃষ্ণেন্দুবাবুর পদত্যাগকে সমর্থন করেন তৃণমূলেরই ১৫ জন কাউন্সিলর। তাঁদের সমর্থন করেন বিজেপির দুই এবং আরএসপি-র এক কাউন্সিলরও।
তবে এ দিনের বৈঠকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বোর্ড অফ কাউন্সিলরের সভায় গরহাজির ছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু সহ তৃণমূলের আট কাউন্সিলর। কৃষ্ণেন্দুবাবুর সুরেই সুর মিলিয়ে বৈঠকে হাজির ছি্লেন না কংগ্রেস এবং সিপিএমের তিন কাউন্সিলরও। কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী বৈঠক ডাকার দিন এবং যেদিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেই দিন বাদ দিতে হয়। তবে এখানে সেই নিয়ম মানা হয়নি।’’ তবে মালদহের মহকুমা শাসক সন্দীপ নাগ বলেন, ‘‘রাজ্যের নির্দেশ মেনে এ দিন সভা ডেকে সকল কাউন্সিলরদের চিঠি পাঠানো হয়েছিল। এ দিন সংখ্যা গরিষ্ঠ কাউন্সিলর উপস্থিত থাকায় সভার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চেয়ারম্যানের পদত্যাগের সমর্থন পত্র রাজ্যে পাঠানো হবে।’’
এ দিনের বৈঠকে তৃণমূলকে বিজেপির কাউন্সিলরেরা সমর্থন করায় তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা কাউন্সিলর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘নোট বাতিল ইস্যুতে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মালদহে তাঁরই দল বিজেপির সমর্থন নিচ্ছে। এখানে তৃণমূলের দু’মুখো নীতি স্পষ্ট।’’ এ দিনের বৈঠক প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘বিগত বছর চেয়ারম্যান নির্বাচনেও আমরা বয়কট করেছিলাম। এ বারও সভা বয়কট করলাম। তবে এ বার পুরসভার আইন মেনে সভা ডাকা হয়নি। আর চেয়ারম্যানের ইস্তফাপত্রও নিয়ম মেনে হয়নি।’’ কংগ্রেসের সুরেই সুর মিলিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে বৈঠক ডাকা হয়নি, তাই আমাদের কাউন্সিলর বৈঠকে হাজির ছিলেন না।’’ তবে বামেদের এক কাউন্সিলরের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দলীয় স্তরে সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’’
এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি সুব্রত কুণ্ডু বলেন, ‘‘সমর্থনের কোনও বিষয় নেই। এখানে আমাদের কাউন্সিলরেরা নিরপেক্ষ ভুমিকা নিয়েছেন। এর বেশি কিছু না।’’ তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা কাউন্সিলর দুলাল সরকার বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ মেনে সভায় কাউন্সিলেরা উপস্থিত ছিলেন। এখানে দল হিসেবে নয়, কাউন্সিলর হিসেবে কৃষ্ণেন্দুবাবুর পদত্যাগকে সমর্থন করেছেন বিজেপি এবং আরএসপির এক কাউন্সিলর।’’
মালদহ জেলা পরিষদ দখলের সময় ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণবাবুকে সরানোর ডাক ওঠে দলের অন্দরেই। আর এর সূচনা করেছিলেন নির্দল বিধায়ক নিহাররঞ্জন ঘোষ। কৃষ্ণেন্দুবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর শর্তে সমর্থন করেছিলেন তৃণমূলকে। এরপরই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের দুলাল সরকারের নেতৃত্বে কৃষ্ণেন্দু বিরোধী আট কাউন্সিলর সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন।
দলের নির্দেশ মেনে ১ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। সেই পদত্যাগের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের নিয়ে জেলা প্রশাসনকে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন। এ দিনের এই বৈঠককে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। পুরসভার ২০ মিটারের মধ্যে জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। পুরসভার দু’প্রান্তে ড্রপ গেট করে গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যে দিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের ১৫ জন কাউন্সিলর এক সঙ্গে এদিন পুরসভায় যান। আর বিজেপির দুই এবং আরএসপির এক কাউন্সিলর পৃথক ভাবে পুরসভার বৈঠকে হাজির হন। তবে কৃষ্ণেন্দুবাবু সহ তাঁর অনুগামী আট কাউন্সিলর গরহাজির ছিলেন এ দিন। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে আমি ইস্তফা দিয়েছি। আর এ দিনের বৈঠক নিয়ম মেনে না হওয়ায় আমি সেখানে হাজির হইনি।’’ এই বিষয়ে বিধায়ক নিহারবাবু বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশ মতো বাকি আট কাউন্সিলর বৈঠকে হাজির থাকলে ভাল হত। বৈঠকে তাঁরা গরহাজির থাকায় জেলা নেতৃত্ব যথাস্থানে রিপোর্ট দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy