উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা। নিজস্ব চিত্র।
সকাল বেলাতেই ক্যাম্পাসে পৌঁছে গিয়েছেন অনেকেই। তার পর দল বেঁধে শালবাগানে আড্ডা। বেলা গড়াতেই লুচি, ছোলার ডাল, ধোসা, রসোগোল্লা দিয়ে টিফিন। ডেকে আনা হল সেই ঝালমুড়িওয়ালা, ফুচকা বিক্রেতা, চায়ের দোকানিদেরও। ছাত্র জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই শৈলী মাহাতোর ঠেলা গাড়ির সামনে বন্ধুরা মিলে দাঁড়িয়েই ফুচকা খাওয়া চলত, কখনও বাবলুবাবুর দোকান থেকে চা খাওয়া হত। তাই তাঁদেরও সামিল করা হয়েছে। কালুবাবু ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। তাঁকেও ডাকা হয়েছে। তারাও দোকান সাজিয়ে বসলেন।
কয়েক জন আবার গিয়েছেন বর্তমানে অ্যাকাডেমি স্টাফ কলেজের ভবন এলাকায়। ওই ভবনের লাগোয়া ঘরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজ চলত। সেখানে সিঁড়ির উপরে বসেই ছাত্র জীবনে আড্ডা চলত ক্লাসের ফাঁকে। শনিবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পুনর্মিলন উৎসবকে ঘিরে পুরনো সেই স্মৃতির সরণিতে ফিরতেই উৎসাহী ছিলেন তপন দাস, নারায়ণচন্দ্র ঘোষ, নান্টু পাল, সুরেশ মিত্রুকা, অরুণ সরকার, অলকেশ দের মতো ব্যক্তিরা। তপনবাবু এখন আসানসোল আদালতে অতিরিক্ত জেলা জজ, অরুণবাবু ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বার কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, নারায়ণবাবু উত্তর দিনাজপুর বার অ্যায়োসিয়েশনের সম্পাদক, নান্টুবাবু শিলিগুড়ি পুরসভার তৃণমূলের দলনেতা। বাকিদের অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। কেউ আবার আইনেরই শিক্ষকতার সঙ্গে বা অন্য পেশায় যুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাক্তনীদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, ১৯৭৪ সালে ক্যাম্পাসে আইন কলেজ চালু হয়েছিল। পরে আইন বিভাগ হিসেবে তা গড়ে ওঠে। নারায়ণবাবু, ভবানীপ্রসাদ লাহিড়ি, অনিলচন্দ্র বিশ্বাসরা কথা বলতে গিয়ে ফিরে গেলেন ফেলে আসা দিনগুলিতে। বললেন, ‘‘তখন শিলিগুড়ি শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার বাস কম ছিল। লোকাল বাসগুলি ভর্তি থাকত যাত্রীতে আমরা ভিড় এড়াতে বাসের মাথায় চড়ে আসতাম।’’ অরুণ সরকার কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রছিলেন। এখন শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাশ করেছেন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। কিন্তু কখনও পুনর্মিলন উৎসবের ব্যাপার ছিল না। সেই কোনও প্রাক্তনীদের সংগঠনও। অলকেশ চক্রবর্তী, অরুণবাবু, ধীমান বসুদের মতো প্রাক্তন ছাত্ররা তাই চাইছিলেন একটা পুনর্মিলন উৎসব করা হোক, প্রাক্তনীদের সংগঠন হোক। আইন বিভাগের প্রধান রথীন বন্দ্যোপাধায়ের মতো শিক্ষকরাও উৎসাহ দেন। আরও অনেককে এক করে ভাবনাচিন্তা এগোয়। শেষ পর্যন্ত দিনক্ষণ ঠিক করে শনিবার পুনর্মিলন উৎসবের কথা ঘোষণাও করে দেন তাঁরা। সেই মতো এ দিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে তো বটেই এমনকী কর্মসূত্রে কলকাতা বা মুম্বইতে রয়েছেন এমন কয়েক জনও হাজির ছিলেন এ দিনের অনুষ্ঠানে। পুনর্মিলন উৎসবের আবেগেই দিনভর মজে ছিলেন ওঁরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তনীদের সংগঠনও গড়া হয়। আইন বিভাগের উন্নয়নে তারা ভূমিকা নেবেন বলেও কর্মকর্তারা ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
এ দিন এসেছিলেন প্রায় ৪০০ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী। শুরুতে যে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের তাঁরা হারিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বেদি তৈরি করে তার সামনে দাঁড়িয়ে স্মরণ করা হয়। কাদের তাঁরা হারিয়েছেন ওই ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরেন একেক জন। এর পর রবীন্দ্রভানু মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। ছিল দুপুরের খাবারের আয়োজন। ডাল, ভাতের সঙ্গে মালাই-চিংড়ি, আরমাছের ঝোল, মাংস, মালাইকোপ্তা, মিক্সড ভেজের মেনু। চাটনি, আইসক্রিমও।
খাওয়ার পর্ভ চুকিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান, কবিতা পাঠ করলেন বহ্নি চক্রবর্তী, ষষ্ঠী ঘোষ, সম্পিতা সান্যালরা অনেকেই। প্রাক্তনী ছাত্র জন্মেজয় গঙ্গোপাধ্যায়, শশাঙ্ক শেখর সিংহ, সন্দীপন সরকার, কৌশিক পালরা ৬ জন মিলে একটি ‘ব্যান্ড’ তৈরি করেছেন বছরখানেক হল। নাম দিয়েছেন ‘বিয়ন্ড অকটেভ’। ব্যান্ডের গায়ক মিথিলেশ প্রসাদ, ড্রাম বাদক রজত সিংহরা বলেন, ‘‘কলেজের দিনগুলিতে ক্লাসে, ক্যান্টিনে বসে গান গাইতাম। এ দিন সেই পুরনো স্মৃতিতেই ফিরে গেলাম সকলে মিলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy