E-Paper

‘অমিল’ সরকারি সাহায্য, আক্ষেপ ভাঙন-দুর্গতদের

যদিও মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার দাবি, ‘‘ভাঙন-দুর্গতদের পাট্টা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাঁদের দাবি যথাযথ কি না খতিয়ে দেখে সাহায্য করা হচ্ছে আস্তে আস্তে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।’’

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৯:৫৫
ভাঙনের স্মৃতি ভেঙে যাওয়া মসজিদে। পাশে বাঁশের খাঁচা দিয়ে ভাঙন রোখার চেষ্টা। বীরনগরে। ছবি: স্বরূপ সাহা

ভাঙনের স্মৃতি ভেঙে যাওয়া মসজিদে। পাশে বাঁশের খাঁচা দিয়ে ভাঙন রোখার চেষ্টা। বীরনগরে। ছবি: স্বরূপ সাহা

গঙ্গার পারে ঝুলছে মসজিদের একাংশ। তার চার পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা-চোরা ইটের টুকরো। ‘ধ্বংসস্তূপের’ মধ্যেই ত্রিপল, খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের উঠোনে এক মনে বিড়ি বাঁধছেন জনা চারেক মহিলা, যুবতী। এখন তো গঙ্গা শান্ত? প্রশ্ন শুনে বিড়ির ডালি থেকে মুখ সরিয়ে গঙ্গার দিকে চোখ তুলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব হাজেরা বিবি। তিনি বলেন, “মাস গড়ালেই গঙ্গার জল বাড়বে। আর আমাদের রাতের ঘুম উড়ে যাবে। এই শান্ত গঙ্গাতেই তো নদী ভাঙনে চোখের সামনে ভিটেমাটি তলিয়ে যেতে দেখেছি। চিনাবাজার গ্রামকে ধ্বংসস্তূপে বদলে যেতে দেখেছি।” দু’বছর আগে গঙ্গায় ঘর হারিয়ে ত্রিপলের ছাউনিতে বসবাস করলেও, সরকারি সাহায্য মেলেনি, আক্ষেপ তাঁর। যদিও মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার দাবি, ‘‘ভাঙন-দুর্গতদের পাট্টা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাঁদের দাবি যথাযথ কি না খতিয়ে দেখে সাহায্য করা হচ্ছে আস্তে আস্তে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।’’

শুধু চিনাবাজারই নয়, কালিয়াচকের বিননগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গারামটোলা, ভীমাটোলা, মডেল মাদ্রাসাপাড়া, বৈষ্ণবনগরের শোভানগর, সরকারটোলা, মানিকচকের শঙ্করটোলা, গোপালপুরের মতো মালদহের একাধিক গ্রাম গঙ্গা ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার নদী ভাঙন নিয়ে মালদহের প্রশসানিক বৈঠকে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদী ভাঙন ঠেকাতে ভেটিভার ঘাস, ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি আরও বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে ১০ বছরের একটা পরিকল্পনা করতে হবে। নদীর পাড় থেকে কম পক্ষে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য, নদীপারে সেমিনার করতে হবে।” ভাঙন কবলিতদের সরকারি ভাবে সাহায্যও করার আশ্বাস তিনি বৈঠকে দেন।

প্রশাসনিক বৈঠকে ভাঙন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শের বার্তা পৌঁছেছে গঙ্গা পারের গ্রামগুলিতে। চিনাবাজার গ্রামের বছর তিরিশের যুবতী লিলি খাতুন বলেন, “প্রাথমিকে পড়ার সময় বাড়ি থেকে গঙ্গার দূরত্ব ছিল দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। ২০২১ সালে গঙ্গা বাড়ির দুয়ারে পৌঁছে গেল। আর আমাদের ইটের ঘর, শৌচাগার, সবই গঙ্গায় তলিয়ে গেল!” ২০২১ সালে চিনাবাজার, দুর্গারামটোলা, সরকার টোলায় ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন হয়। সে সময় একাধিক মন্দির, মসজিদ, ঘর, বাড়ি নদীতে তলিয়ে যায়।

বাঁশের সঙ্গে বোল্ডার বেঁধে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধের কাজ করা হয়, দাবি গ্রামবাসীদের। পরিমল সরকার বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে কাজ তো দূরের কথা, সরকারি ঘরই মেলেনি। এখনও ত্রিপল, খড়ের ছাউনি করে নদীর পাড়ে বসবাস করতে হচ্ছে।” নদীর পাড়ে কেন? তিনি বলেন, “দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ফলে, পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ টাকা কাঠা দরে জমি কেনার সামর্থ্য নেই। তাই নদীর পারেই নতুন করে ঘর বেঁধে ভাঙনের ভয় নিয়েই বাস করতে হচ্ছে।” সরকার খাসজমি থেকে তাঁদের অন্তত মাথা গোঁজার জন্য জমি দিক, দাবি তাঁর। রাজ্যের সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “ভাঙন কবলিতদের পুনর্বাসন দেওয়া শুরু হয়েছে খাস জমিতে। ভাঙন ঠেকাতে রাজ্য সরকার তৎপর রয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

River Erosion kaliachak

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy