নিয়ন্ত্রণহীন পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যুকে ঘিরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় জনতা। রবিবার রাতে মালবাজারের ওই ঘটনায় লিসরিভার চা বাগান ও রাজা চা বাগানের মোট ৩ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। সোমবার তাদের মুক্তির দাবিতে সকাল সাড়ে আটটা থেকে ফের বাগরাকোট মীনামোড়ের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু হয়। পুলিশ আটকদের মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আধ ঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে।
ঘটনার দিনে পুলিশ বিকেল থেকে রাত অবধি অবরোধ গড়াতে দিল কেন, তাই নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। এমনকী, পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। এ দিন মালবাজার শহরেও ফের গোলমাল ছড়িয়ে পড়তে পারে আঁচ করে সকাল থেকেই বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। মেটেলি, নাগরাকাটা, বানারহাট থানা সহ আলিপুরদুয়ার জেলা থেকেও বিরাট বাহিনী মালবাজারে চলে আসে। তার পরেও এ দিন জাতীয় সড়ক অবরোধ হল। ফলে গোলমাল থামাতে পুলিশের তৎপরতার অভাব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
তার উপরে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশের ওই অস্থায়ী চালক অভিযুক্ত গণেশ নায়েক কোনও লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। যদিও পুলিশ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অভিযুক্ত গণেশের পরিবার ও প্রতিবেশীরাও দাবি করেন, লাইসেন্স নিয়েই তিনি গাড়ি চালান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িটি মালবাজার থানার চা বাগান এলাকায় নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা রবিবার এও অভিযোগ করেন যে, তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ধরা পড়ার পরেও তাঁর কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা গিয়েছিল।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান, ধৃত গণেশের বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ২৭৯ এবং ৩০৪ ধারায় বেলাগাম গাড়ি চালানো ও অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে। এ দিন সকালে তাকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পাঠানো হয়।
স্ত্রী লিনা বাক্সলা তিরকিকে আল্ট্রা সনোগ্রাফি করিয়ে রবিবার বিকেলে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন সিআরপিএফ জওয়ান শম্ভু। স্ত্রী মাথায় হেলমেট না থাকলেও তাঁর মাথায় ছিল। মালবাজারের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দ্রুত গতির পুলিশের গাড়িটি মুখোমুখি এসে তাঁদের ধাক্কা মারে। মারা যান শম্ভু। হাসপাতালে ভর্তি হন গুরুতর জখম তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-সহ আরও চার স্কুটি ও সাইকেল আরোহী। অভিযুক্ত চালক গ্রেফতার হয়। কিন্তু ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে অবশেষে ঘাতক গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তাণ্ডবে জখম হন মেটেলি থানার এক কর্মী। মালবাজার শহর থেকে ঘটনাস্থল মোটে এক কিলোমিটার দূরে হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে এত দেরি হল কেন পুলিশের, এই প্রশ্নে সরব হয়েছে সব বিরোধী দলের নেতারাই। মৃত ও জখমদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণেরও দাবি উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy