Advertisement
E-Paper

চার মাসের শিশুর গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে ডাকাতি

প্রত্যেকের হাতেই ছিল ধারাল অস্ত্র। কাপড়ে মুখ বাঁধা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দেখে চার মাসের ছেলেকে কোলে আঁকড়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন মা। মায়ের কোল থেকে অকাতরে ঘুমোন সেই ছেলেকে কেড়ে নিয়ে তার গলায় ধারাল অস্ত্র ঠেকায় ডাকাতদল। এরপরেই বাড়ির লোকেদের হুমকি, ‘ছেলেকে জ্যান্ত ফেরত চাস নাকি টাকা, সোনাদানা যা আছে সব দিবি?’ শুক্রবার রাত প্রায় ১২টা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৫
দেবীগঞ্জের নলকুঠিয়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির পর।

দেবীগঞ্জের নলকুঠিয়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির পর।

প্রত্যেকের হাতেই ছিল ধারাল অস্ত্র। কাপড়ে মুখ বাঁধা সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দেখে চার মাসের ছেলেকে কোলে আঁকড়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন মা। মায়ের কোল থেকে অকাতরে ঘুমোন সেই ছেলেকে কেড়ে নিয়ে তার গলায় ধারাল অস্ত্র ঠেকায় ডাকাতদল। এরপরেই বাড়ির লোকেদের হুমকি, ‘ছেলেকে জ্যান্ত ফেরত চাস নাকি টাকা, সোনাদানা যা আছে সব দিবি?’ শুক্রবার রাত প্রায় ১২টা। মালদহের চাঁচল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দেবীগঞ্জ নলকুঠিয়া গ্রামে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গোকুল সরকারের বাড়িতে যে ডাকাত পড়েছে তা টেরই পাননি পড়শিরা।

কোনও রকম হইচই না করে এক রকম চুপিসাড়েই গোকুলবাবুর বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল দুষ্কৃতী দলটি। তারপর এক ঘণ্টা ধরে বাড়ি দাপিয়ে লুঠপাটের পর চম্পট দেয় তারা। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর বাড়ির লোকের চিত্কারে ঘুম ভাঙে পড়শিদের। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কারা ওই ঘটনায় জড়িত তা চিহ্নিত করা চেষ্টা চলছে।’’

চাঁচল-হরিশ্চন্দ্রপুর ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের দেবীগঞ্জ মোড় থেকে এক কিলোমিটার দূরে দেবীগঞ্জ নলকুঠিয়া গ্রাম। এই গ্রামেই বাড়ি কনুয়া হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোকুলবাবুর। চাঁচলেও তার বাড়ি রয়েছে। তঁার বড় ছেলে জয়ন্ত পরিবার নিয়ে চাঁচলে থাকেন। আর গ্রামের বাড়িতে ছোট ছেলে জগদীশ, তার স্ত্রী বুল্টি ও তাদের চার মাসের ছেলেকে নিয়ে থাকেন গোকুলবাবু।

ছেলে কোলে নিয়ে বুল্টিদেবী।

গোকুলবাবুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়িটির চারদিক উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সেই পাঁচিল টপকে এদিন রাতে বাড়িতে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। পাঁচিলের গায়েই রয়েছে টিনের ছাউনি দেওয়া রান্নাঘর। এক দুষ্কৃতী সেই টিনের চালে উঠে শব্দ করতে শুরু করেন। সেই শব্দ শুনে কি হচ্ছে তা দেখতে গোকুলবাবু দরজা খুলে বাইরে বের হতেই তার মাথায় বন্দুক চেপে ধরে এক দুষ্কৃতী। এরপর তার ঘরে ঢুকে গোকুলবাবুর স্ত্রী স্নিগ্ধা দেবীর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

প্রৌঢ় বাবা বাইরে বেরিয়ে পড়ে গেলেন পড়ে গেলেন কিনা দেখতে এরপর ছেলে জগদীশ দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে সেই ঘরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দেখে ছেলেকে কোলে আঁকড়ে ধরে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন বুল্টিদেবী। চার মাসের শিশুটির গলায় ভোজালি ঠেঁকিয়ে এরপর একে একে সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তার পর শিশুকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। এরপরে১৫ ভরি সোনার অলঙ্কার সহ নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী দলটি। গোকুলবাবু বলেন, ‘‘টিনে কিসের শব্দ হচ্ছে তা দেখতে দরজা খুলতেই এক দুষ্কৃতী আমার মাথায় বন্দুক চেপে ধরে। ভিতরে আটজন ঢুকলেও মনে হচ্ছে বাইরে আরও বেশ কয়েকজন ছিল।’’ দিনের আলো ফুটলেও আতঙ্ক দূর হয়নি বুল্টিদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘সব গিয়েছে। কিন্তু ছেলের গলায় ধারাল অস্ত্র ধরে হুমকির দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছি না।’’

ছবি: বাপি মজুমদার।

Malda Robbery Debiganj police Chanchal Gokul Sarker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy