ভোট এলেই ‘ভূতের উপদ্রব’ নাকি বেড়ে যায় ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকায়। সে কথা প্রশাসনের কানেও তুলেছে তৃণমূল। ‘ভূত’ তাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছেও। ওই ‘ভূতের’ দৌরাত্ম্যেই নাকি গত কয়েকটি নির্বাচনে তাদের পরাজিত হতে হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূলের।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ভোটার তালিকা পূঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের বাদ দিতে হবে। প্রশাসনের নিয়োগ করা যে সব কর্মী তথা বিএলওরা ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসক দল।
ডাবগ্রামের তালিকায় ‘ভূতের’ অস্তিত্ব তৃণমূল নেতারা টের পেলেনকী করে?
জেলা তৃণমূলের দাবি, সন্দেহ দানা বেঁধেছে গত কয়েকটি ভোটের আগে হঠাৎ করে তালিকায় বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম ঢুকে যাওয়া নিয়ে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকে যে প্রবণতা বেড়েছে বলে তাদের দাবি। ২০১১ এবং ২০১৬ সালের পরপর দু’টি ভোটেই তৃণমূলের টিকিটে গৌতম দেব ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে ভোটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। রাজ্যের শাসক দলের দাবি, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পরে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ভোটদাতার সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ২৪ হাজার। তার দুই বছর পরে, ২০২১ সালে ওই বিধানসভা এলাকায় ভোটার বাড়ে প্রায় ২৭ হাজার। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে ডাবগ্রামের ভোটার বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রথম বার বিপুল ভোটে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে এগিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন তৎকালীন মন্ত্রী তথা বর্তমানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। এর পরে গত লোকসভা ভোটেও বিপুল ভোটে এই বিধানসভায় এগিয়েছিল বিজেপি।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ভোটারের সংখ্যা এত বাড়ছে কেন? জেলার অন্যান্য বিধানসভায় এত ভোটার বাড়ছে না। ডাবগ্রামে ভোটার বাড়ছে এবং ভোটের ফলও একই রকম হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে বলবো, পুরো ভোটার তালিকা ধরে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটদাতাদের যাচাই করা হোক। না হলে ভূত ধরা যাবে না।” প্রশাসনের নিয়োগ করা সরকারি কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই করার কথা। সে কাজে কি খামতি দেখা যাচ্ছে? মহুয়া বলেন, “কোনও বিএলও যদি নিজের কাজ না করেন,তা প্রশাসন দেখবে।”
পাল্টা কটাক্ষ করে ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওরা বুঝতে পারছে ভূত না ধরা পড়লে ওদেরই ক্ষতি। যাই হোক, ভালই হয়েছে। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী এসে বসেছে। ওদের কে বসাল, কবে তালিকায় নাম উঠল সব এ বার যাচাই হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)