Advertisement
E-Paper

সন্তান শোক ভুলে সফল সায়েমা

শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেই ফলাফলে সমস্ত বিষয়ে ভাল ভাবে পাশ করে ফের সকলকে চমকে দিলেন সায়েমা। তাঁর সাফল্যে খুশি পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে সন্তুষ্ট হলেও গর্ভস্থ সন্তানের কথা ভেবে কান্নায় চোখ ভিজে যাচ্ছে সায়েমার।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০২:২৮
সায়েমা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

সায়েমা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই হারিয়েছিলেন গর্ভস্থ সন্তান। ছিল না বসে থাকার শারীরিক ক্ষমতাও। শুধুমাত্র মনের জোরেই মালদহ মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগের শয্যায় শুয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন গাজলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সায়েমা খাতুন। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেই ফলাফলে সমস্ত বিষয়ে ভাল ভাবে পাশ করে ফের সকলকে চমকে দিলেন সায়েমা। তাঁর সাফল্যে খুশি পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে সন্তুষ্ট হলেও গর্ভস্থ সন্তানের কথা ভেবে কান্নায় চোখ ভিজে যাচ্ছে সায়েমার।

গাজল থানার বৈরগাছি পঞ্চায়েতের বালুটোলা গ্রামের বাসিন্দা সায়েমা খাতুন। তিনি গাজলের রানিনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। তাঁর বাবা সাদিকুল রহমান পেশায় দিন মজুর। বছর দেড়েক আগে গ্রামেরই বাসিন্দা অসীম আক্রমের সঙ্গে বিয়ে হয় সায়েমার। অসীম নিজের জমিতেই চাষবাস করেন।

সায়েমার পরীক্ষার সিট পড়েছিল পুকুরিয়া হাই স্কুলে। বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরেই প্রসব যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সায়েমা। মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি করা হলে অস্ত্রোপচারে মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেই পুত্রশোক ভুলে বাকি পরীক্ষাগুলি দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন সায়েমা। তাঁর মানসিকতা দেখে দ্রুত হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই দিয়েছিলেন ইংরেজি পরীক্ষা। হাসপাতালে ন’দিন ভর্তি ছিলেন তিনি। বাকি পরীক্ষাগুলিও হাসপাতালেই দেন সায়েমা।

একদিকে গর্ভস্থ সন্তান হারানোর বেদনা। অন্য দিকে অস্ত্রোপচার হওয়ার জেরে নিজে থেকে উঠে বসার ক্ষমতা ছিল না। এর পরেও তিনি মোট ২৬৪ নম্বর পেয়েছেন। বাংলায় ৫৩, ইংরেজিতে ৪৬, শিক্ষা বিজ্ঞানে ৬২, ইতিহাসে ৫০ এবং ভুগোলে ৫৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি। তাঁর ইচ্ছে, বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হওয়ার। তিনি বলেন, “আমার উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করার স্বপ্ন রয়েছে। অভাবের কারণে পরিবারের লোকেরা বিয়ে দিয়ে দেন। আমার স্বপ্নের কথা ভেবে স্বামী পড়া চালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন গর্ভের সন্তানকে হারিয়েছিলাম। একদিনে আমার দু’টি স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা চাইনি। তাই মনের জোরেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এ দিন ছেলের কথা মনে পড়ছে।’’ তাঁর মাসি রুপসানা বিবি বলেন, “শরীর সুস্থ থাকলে আরও ভালো ফলাফল করতে পারত সায়েমা।” স্বামী অসীম আক্রাম বলেন, “সায়েমা যতদূর পর্যন্ত পড়তে চায়, তাঁকে পড়াব।”

Higher Secondary Results 2018 Sayema Khatun Successful
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy